নজরুল বিন মাহমুদুল: গত বছরের ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম যখন করোনা সংক্রমণের খবর প্রকাশিত হয় তখন কে জানতো এটি গোটা বিশে^র জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। করোনা সংক্রমণের কয়েকদিনের মধ্যে চীন সম্মুখীন হয় স্মরণকালের একটি কঠিন সময়ের। যখন বিশ্ববাসী এই ভাইরাসকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। পরে যখন চীনে লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে লাগলো ঠিক তখনই টনক নড়ে বিশ^ নেতাদের। হুমড়ি খেয়ে পড়ে নানা সতর্কতামূক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। ততক্ষণে ঘাতক এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে। আর এর পরের কথা তো সবারই জানা। সময়ের সাথে লাগামহীনভাবে বাড়তে লাগলো সংক্রমণ ও মৃত্যু। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে শামিল হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। যেটা বিশ^বাসী কখনও কল্পনাও করেনি। সারা বিশে^র মতো আমাদের বাংলাদেশেও মানুষের মাঝে ছিলনা কোন চিন্তা কিংবা হতাশা। দেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করা হয় গত বছরের ৮ই মার্চ। এদের মধ্যে একজন নারী ও দুইজন পুরুষ। তখনও মানুষের মাঝে খুব একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু সময়ের সাথে যখন পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যু ঠিক তখনই টনক নড়ে সরকারের। বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচার করা হলেও মানুষের মাঝে খুব একটা চিন্তাভাব লক্ষ্য করা যায়নি। যে যার মতো করে চলতে লাগলো। হঠাৎ করে যখন দেশে লাগামহীন সংক্রমণ ও মৃত্যু হতে শুরু করলো তখন সরকার লকডাউন ঘোষণা করলো। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষই সেই লকডাউনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। জীবন ও জীবিকার অজুহাত দেখিয়ে ভঙ্গ করে সরকার ঘোষিত লকডাউন। সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করেও মানুষকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধাপে সরকার লকডাউন ঘোষণা করে। তখনও দেশের অধিকাংশ মানুষ বিশেষ করে যারা গ্রামাঞ্চলে থাকে তাদের মধ্যে করোনা ভাইরাস সর্ম্পকে কোন ধারণাই ছিল না। তারা শুধু এটাকে সাধারণ সর্দি কাশি মনে করতো। যদিও পরবর্তিতে তাদের এর খেসারতও দিতে হয়েছে। সাধারণ মানুষের উদাসীনতার কারণে একদিকে যেমন বেড়েছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু অন্যদিকে বেড়েছে দারিদ্রতা ও খাদ্যাভাব। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী দেশে এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭০ লাখ ১৫ হাজার ২৩৪টি। মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৭ জনে। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট ১৬ হাজার ৬৩৯ জনের মৃত্যু হলো।একটা প্রশ্ন আমাদের মাঝে অবশ্যই ঘুরপাক খাওয়ার কথা সেটি হলো এতো সংক্রমণ ও মৃত্যু হওয়ার পরেরও দেশের মানুষ আগের চেয়ে কতটুকু সচেতন হয়েছে নাকি সচেতনা কমেছে। সামগ্রীকভাবে চিন্তা করলে লক্ষ্য করা যাবে যে পূর্বের চেয়ে দেশের মানুষের মাঝে সচেতনতা অনেকটাই কমেছে। যদিও মাঝখান দিয়ে মানুষের মাঝে কিছু সচেতনতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। এখনও দেখা যায় অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। কারো মাস্ক আছে থুতলিতে আটকানো কারো আবার শার্টের বোতামে। অনেকেই আছেন যারা কিছু খাওয়ার আগে ভাল করে হাত সাবান দিয়ে জীবাণুমুক্ত করেন না। সময়ের সাথে মানুষের করোনা নিয়ে সচেতনতা তুলনামূলকভাবে অনেক কমেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা বলছেন, এমন অনেকেই আছেন যারা করোনার টিকা নেওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন না। যদিও বার বার বলা হয়ে অবশ্যই সবাইকে স্বাস্থবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যদিকে যারা করোনার টিকা গ্রহণ করেনি তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পালনে বেশি উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। দেশের সকল মানুষকে টিকার আওতায় আনা আদৌ সম্ভব নয়। সে হিসেবে সকলকে ব্যক্তিগত ভাবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজের ও নিজের পরিবারের কথা ভেবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার দফায় দফায় লকডাউন দিলেও সাধারণ মানুষ সেটি যথাযথ ভাবে পালন করেনা। এজন্য ক্রমাগত দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েই চলেছে। কাজেই সরকারের উচিত সাধারণ মানুষকে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষের মাঝে করোনা সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচার বৃদ্ধি করা। করোনা কি এবং এটি কি করতে পারে তা অবগত করা। একজনের অসচেতনতা কয়েকজনের জন্য কাল হয়ে দাড়ায়। লকডাউনের চেয়েও মানুষকে করোনার স্বাস্থ্যবিধি পালনের জন্য সচেতন করা বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তাই আমাদের সকলের উচিত সরকারের পাশাপাশি আমাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে করোনা সর্ম্পকে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তাহলে হয়তো আমাদের দেশে লাগামহীন করেনা সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!