জহিরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর: পশ্চিমাদের তৈরি কাপড় বর্জনের প্রত্যয়ে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধী বর্তমান ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা নতুন মুন্সির হাটে এসে ১০৬ শতক জায়গায় হস্তচালিত তাঁত শিল্পটির উদ্বোধন করেন। এরপর গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট নামে এই প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়। তৎকালীন সময়ে পাক-ভারত উপমহাদেশে হস্তচালিত চরকা দিয়েই বিভিন্ন জায়গায় তাঁতিরা কাপড় বুনতো। ওই সময় এই হস্তচালিত তাঁত চরকার মাধ্যমে এলাকার গ্রামীণ জনপদের জনসাধারণের প্রয়োজন মেটাতে ধুতি, লুঙ্গি, গামছা, শাড়ী কাপড় তৈরি হতো এই তাঁতশিল্প টিতে। তখন এই তাঁত শিল্পকে ঘিরেই অত্র এলাকায় তাঁতিদের বসবাস শুরু হয়। এই তাঁতশিল্পে ১২ হস্তচালিত তাঁত যন্ত্র মাধ্যমে পালাক্রমে ২৪ ঘন্টা ঠক ঠক আওয়াজে অত্র এলাকার মানুষের ঘুম ভাঙতো। সময়ের সাথে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছিল অত্র এলাকার জীবন ব্যবস্থা। এই তাঁত শিল্পকে ঘিরে এখানে একটি বাজার তৈরি হয়েছিল। পরবর্তিতে এই বাজারের নামকরণ করা হয় নতুন মুন্সিরহাট বাজার। বর্তমানে এটি একটি বড় বাজারে রূপান্তরিত হয়েছে।১৯৪৮ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই তাঁত শিল্পটি বন্ধ হয়ে নষ্ট হয়ে যায় হস্তচালিত তাঁত যন্ত্র গুলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অত্র এলাকায় বেশ কিছু তাঁতিরাও এখান থেকে চলে যায় কলকাতায়।দেশ বিভাজনের পর যেসব তাঁতিরা এখানে থেকে যায় তারাই আবার এই শিল্পটি কে নতুন করে গড়ে তোলে।এছাড়া বর্তমান নোয়াখালী জেলার গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট প্রধান কার্যালয় থেকে সহযোগিতা নিয়ে আবার চালু করা হয় এই হস্তচালিত তাঁত শিল্পটি।এলাকার স্থানীয় প্রবীণ কালু বাবু বলেন, ‘আমার বাপ দাদার আমল থেকেই এখানে এই তাঁত শিল্পটি ছিল এই তাঁত শিল্পকে ঘিরেই আমরা কাপড় তৈরীর অনেক কাঁচামাল সংগ্রহ করে বিক্রয় করতাম। এছাড়া অত্র এলাকার সাধারণ মানুষের চাহিদা মিটিয়ে এখানের তৈরি কাপড় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য এলাকায় বিক্রয় করতো এলাকার কাপড় ব্যবসায়ীরা।তিনি আরো বলেন, দুঃখের বিষয় স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এখানে বোমা পড়ে তাঁত শিল্পটি নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এই এই ট্রাস্ট’র প্রধান কার্যালয় নোয়াখালী থেকে অত্র প্রতিষ্ঠানের এরিয়া ম্যানেজার প্রফুল্ল চন্দ্র ভৌমিক নতুন তাঁত যন্ত্রের বিভিন্ন চরকা সংগ্রহ করে আবার প্রতিষ্ঠা করেন এই তাঁত শিল্প টি।২০১৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় উপ-রাষ্ট্রদূত বাবু সন্দীপ চক্রবর্তী আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এখানে ৮ টি তাঁত যন্ত্রের মাধ্যমে আবার চালু করেন এই শিল্পটি। বেশ কয়েকবছর এই তাঁত যন্ত্রে স্থানীয় তাঁতিরা কাপড় তৈরি করে চাহিদা মেটাতো এলাকার সাধারণ জনগণ। কিন্তু বর্তমানে অটো পাওয়ার মেশিনে কাপড় তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় কাঁচামাল সুতা ও রং দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় ধীরে ধীরে বন্ধ হতে চলছে এই প্রাচীন তাঁত শিল্পটি।সুপারভাইজার কল্পনা মন্ডল জানায়, আগে যথেষ্ট জনবল সহ তাঁতিরা ছিল। কিন্তু এখন হাতে চালিয়ে তাদের কায়িক পরিশ্রম বেশী হওয়ায় তারা এখানে কাপড় তৈরি করতে আসে না। কয়েকজন তাঁত শিল্পী থাকলেও পারদর্শী না হওয়ায় নষ্ট হওয়ার পথে ববিন সহ অনেক কাঁচামাল। এতে দিন দিন ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে এই শিল্পটি।এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের এরিয়া ম্যানেজার প্রফুল্ল চন্দ্র ভৌমিক বলেন, প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখার লক্ষ্যে গান্ধীজীর সেই বাণীতে এখানে হাতে তৈরি মেশিন ছাড়া অটো পাওয়ার কোন কাপড় তৈরীর মেশিন স্থাপন করবে না। শুধু ঐতিহ্যটিকে ধরে রাখার লক্ষ্যে হস্তচালিত তাঁত মেশিন দিয়েই কাপড় তৈরি করতে হবে। তিনি আরো বলেন, প্রয়োজন অনুযায়ী প্রধান কার্যালয় থেকে আরও তাঁত যন্ত্র এনে কিছু দক্ষ তাঁতি তৈরি করার নিমিত্তে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই শিল্পটিকে লাভবান করার চেষ্টা করা হবে।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!