প্রফেসর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম:পাখ-পাখালীর দেশ বাংলাদেশ। বিভিন্ন ঋতুতে পাখীরা তাদের স্বভাবগত ডাকের মাধ্যমে আমাদেরকে আনন্দ দেয়। পাখীর কলরবে সকালের ঘুম ভাঙ্গে। ময়না, শালিক,শামুখখোল, ঘুঘু, মুনিয়া, কানিবক, সবুজ টিয়া প্রভৃতি পাখি আমাদের দেশে দেখা যায়। পাখিরা দেশের রতœ। পাখি উষ্ম রক্ত বিশিষ্ট মেরুদ-ী প্রাণী। এরা মূলতঃ বৃক্ষবাসী ও আকাশচারী। পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখি আছে।সমগ্র ভারত উপমহাদেশে রয়েছে প্রায় ১২ শত প্রজাতির পাখি। এরমধ্যে আমাদের দেশে আছে প্রায় ৭ শত প্রজাতির পাখি।
এখন শীতের শুরু, আর এসময় অসংখ্য পরিযায়ী পাখি আমাদের দেশে আসে মেহমান হিসেবে। বিল, লেকসহ বিভিন্ন জলাশয়ে তারা অবস্থান করে।এদের দলে দলে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য দেখার জন্য মানুষ সমবেত হয় তাদের কাছাকাছি, তাদের সৌন্দর্যে মানুষ মুগ্ধ হয়।পরিযায়ী পাখিরা হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করে এক দেশ থেকে আরেক দেশে নির্দিষ্ট ঋতুতে আসা-যাওয়া করে। আবার ঋতু শেষে যেখান থেকে আসে সেখানে চলে যায়। তাদের পরিযানের অন্যতম কারণ হচ্ছে আবহাওয়ার পরিবর্তন, খাদ্য সংকট ও বংশবৃদ্ধি।আমাদের দেশে দুই ধরনের পাখি দেখা যায়, আবাসিক ও পরিযায়ী। পৃথিবীতে প্রায় ১৮৫৫ প্রজাতিই পরিযায়ী। আমাদের দেশে প্রায় ৭ শত প্রজাতির পাখির মধ্যে অর্ধেকই পরিযায়ী।আমাদের দেশে পরিযায়ী পাখি কমতে শুরু করেছে,কারণ কিছু লোভী শিকারীর শিকার,লেক, বিল ও জলাশয়ের পরিমান কমে যাওয়া, বৃক্ষ নিধন, নির্জন স্থানের অভাব।পরিযায়ী পাখি শিকার করলে, ভক্ষণ করলে, সংস্পর্শে আসলে মানুষ সহ বিভিন্ন প্রাণীর রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন: বার্ড ফ্লু, এনসেফালাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, রক্তাক্ত ডায়রিয়া, আ্যাভিয়ান পক্স, জ্বর ও টাইফয়েড। এতে প্রতি বছর বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়। পরিযায়ী পাখিরা পরিবেশবান্ধব।
পরিযায়ী পাখি আমাদের অনেক ধরনের উপকার করে থাকে। যেমন: এরা ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসলকে রোগ-বালাই থেকে মুক্ত রাখে।আগাছার বীজ খেয়ে কৃষি জমিকে আগাছামুক্ত রাখে। মলমূত্র ত্যাগের মাধ্যমে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এরা আমাদের বিনোদন যোগায়।সংবিধানের ১৮(ক) ধারা অনুযায়ী: ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।”
” বন্যপ্রাণী ( সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন,২০১২ ” অনুযায়ীঃ দেশীয় পাখি বা পরিযায়ী পাখি শিকার, হত্যা,আটক, ক্রয়-বিক্রয় দন্ডনীয় অপরাধ।এর শাস্তি বা দন্ড হলো সর্বোচ্চ ২ ( দুই) বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা ২ ( দুই) লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড। তাই পরিযায়ী পাখির সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের।বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখিসহ সকল ধরনের পাখি সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।পাখি পরিবেশের খাদ্য শৃঙ্খল তথা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।পাখিদের নান্দনিক সৌন্দর্য অপরিসীম। যা দেখে দর্শনার্থীর মন ভালো হয়ে যায়।পাখি প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি, এদের সংরক্ষণ করা সকলেরই দায়িত্ব। তথ্যসূত্রঃ বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটবন অধিদপ্তর,আগারগাঁও, ঢাকা।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও গবেষকএবং প্রতিষ্ঠাতা ও চীফ মেন্টরপরিবেশ ক্লাব বাংলাদেশ।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!