প্রফেসর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: পরিবেশ ক্লাব বাংলাদেশ’র প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (২০২১) উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকায় ‘কার্বন ট্যাক্স আরোপ কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে’, এই বিষয়ের ওপর আমার একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।সেখানে জলবায়ু বিষয়ক জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেলের নিম্নোক্ত প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেছিলাম," কার্বন নিঃসরণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ১২ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে খরা, বন্যা আর ভয়াবহ তাপ প্রবাহের মতো মহাবিপর্যয় নেমে আসতে পারে।আমরা সেই বিপর্যয় ক্রমাগত অবলোকন করছি। বিপদ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। শিল্পোন্নয়ণের নামে অত্যধিক কার্বন নিঃসরণ করছে উন্নত দেশগুলো,ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ। যারা কার্বন নিঃসরণ তেমন করছে না।প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘উষ্ণায়ন ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব যদি ব্যর্থ হয়, তবে ২০৩০ সাল থেকে ২০৫২ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার লক্ষ্য মাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। "প্রবন্ধটিতে আমার আলোচনায় বলেছিলাম, জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের ফলে,পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বজুড়ে উৎপাদন ব্যবস্হায়ও ব্যাপক ক্ষতি হবে। উৎপাদন ব্যবস্হায় বিরূপ প্রভাব পড়লে সেটি আমাদেরকে দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে নিপতিত করবে।তাই সতর্কতা অতি জরুরী। আমরা জানি, ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি সম্পাদনের বিষয়, যেখানে ১৯৬ টি দেশ স্বাক্ষর করে। চুক্তির শর্ত পূরণে দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার কমাতে শুরু করে, যাতে কার্বন নিঃসরণ কমে আসে।আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং - কে যিনি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ঘোষণা করেছিলেন, "২০৬০ সাল নাগাদ তাঁর দেশ কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনবেন।" চীনের পর জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও কানাডা একই লক্ষ্য মাত্রার কথা জানিয়েছে। অপরদিকে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা আশাকরছি,ক্ষমতাধর রাষ্ট্র প্রধানরা তাঁদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির হাত থেকে বিশ্বকে মুক্ত করবেন।কিন্তু পাঁচ বছরেও প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছাতে না পারার কথা তুলে ধরে উন্নত বিশ্বের প্রতি জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়নের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে ভিডিও বার্তায় তিনি এই আহবান জানান। তিনি বলেন বাস্তবতা হলো, " আমরা বসে থাকলেই জলবায়ু পরিবর্তন বিরতি দেবে না বা তার বিরূপ প্রভাব থেকে আমাদের রেহাই দেবে না। " কিন্তু ক্ষমতাধর দেশগুলোর ধীরে চলা ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য মহাবিপদ সংকেত। তাইতো জাতিসংঘের মহাসচিব, ৩৮ টি দেশের ওপর জলবায়ু জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেেেছন। মহাসচিব আরোও বলেন," কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নেমে এলেই জরুরী অবস্থা শেষ হবে। "নরওয়ে সর্বপ্রথম বিশ্বে কার্বন ট্যাক্স আরোপ করেছে। বাংলাদেশেও এই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এমতাবস্থায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এক নতুন বার্তা দিয়েছেন। আইএমএফ মনে করে,উচ্চ গ্রিন হাউস নিঃসরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড ছড়ানোর বিনিময়ে মূল্য পরিশোধ করা উচিত।আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলছে," প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপায় হিসেবে উচ্চ গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিটন কার্বন ডাই-অক্সাইডের জন্য ৭৫ ডলার করে দেওয়া উচিত। " - যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ান - এর প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। সংস্থাটি আরও বলেছে," যেসব শিল্প কারখানা তাদের জন্য পণ্য উৎপাদনের সময় যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস ছড়াবে, সে হিসেবে তাদের অর্থ দিতে হবে।তবেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য সহজে অর্জিত হতে পারে। " কার্বন নিঃসরণের জন্য এই অর্থ পরিশোধের ব্যবস্হাকে " কার্বন প্রাইসিং সিস্টেম " বলা হয়। বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশেই এই ব্যবস্হা চালু করা হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোন মূল্য নির্ধারণ করা নেই।কারণ যারা এই মূল্য নির্ধারণ করবে তারাইতো কার্বন নিঃসরণকারী দেশ।তবে আই এমএফ- এর প্রস্তাবকে গ্রহণ করা হলে অনেক কার্বন নিঃসরণকারী শিল্প কারখানা তাদের কার্বন নিঃসরণের বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।জি-২০ ভূক্ত দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়ে আইএমএফ বলেছে," উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের দেশের কার্বন নির্গমনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার সবচেয়ে দ্রুত ও সহজ উপায় হচ্ছে এটি।"২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা দেড় থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার কথা বলা হয়েছে। আইএমএফ বলছে, " এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি টন নিঃসরিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের জন্য ৭৫ ডলার করে সংগ্রহ করতে হবে। " বাংলাদেশেও যে সমস্ত শিল্প কারখানা কার্বনসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ ভূমিতে ও আকাশে ছড়ায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে সে সমস্ত শিল্প কারখানার মালিককে ক্ষতিপূরণ কর আদায় করতে হলে তারা ক্রমান্বয়ে তাদের সকল ধরনের বর্জ্য নিঃসরণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবে।সরকারকে এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি এবং এটি এখনই জরুরী। আমাদের সরকার যদি এরকম কর বা ট্যাক্স আদায় করে সে অর্থ দিয়ে " পরিবেশ ও জলবায়ু উত্তরন ফান্ড " গঠন করে, তাহলে সেটি পরিবেশ ও জলবায়ু উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।এই ফান্ডের অর্থ সরকার নিজ উদ্যোগে অথবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমেও পরিবেশ উন্নয়নের জন্য ব্যয় করতে পারে।এই ফান্ডের অর্থ সরকার নিজ উদ্যোগে অথবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমেও পরিবেশ উন্নয়নের জন্য ব্যয় করতে পারে। নিজেদের এই ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অবশ্যম্ভাবী।যেমন, ‘পরিবেশ ক্লাব বাংলাদেশ’ একটি স্বেচ্ছাসেবী, অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সংগঠন। এই সংগঠন শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিবেশ শিক্ষা ও পরিবেশ সচেতনতার ওপর কাজ করে। তারা পরিবেশ উন্নয়নে শ্রম ও মেধা সরকারের সাথে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। পরিশেষে বলি, ‘কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনি, পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসি। ’ ‘ভোগে নয়, ত্যাগেই তৃপ্তি’ অর্থের লোভে আর কলকারখানার কার্বন নিঃসরণ না করি।’লেখকঃ শিক্ষাবিদ ও গবেষক এবং প্রতিষ্ঠাতা-পরিবেশ ক্লাব বাংলাদেশ
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!