উদ্বোধনের ২৬ বছরেও নেয়া হয়নি সংস্কারের উদ্যোগ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে বন্ধ রয়েছে শৌচাগার কক্ষের-দরজা, জানালা ও ছাউনির টিন মরিচা ধরে ঝরে পড়ছে নেই গভীর নলকুপ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা শিঘ্রই সংস্কারের আশ্বাস পাচ্ছেনা বাসিন্দারা
১. সংস্কারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে- জেলা প্রশাসক ২. বাসিন্দাদের দূর্দশা দেখে লিখিত আবেদন করেছি - ইউপি চেয়ারম্যান৩. শুধু আশ্বাস পাই; কাজের কাজ কিছুই হয়না- আশ্রয়ণ বাসিন্দা
নুর উল্লাহ কায়সার: বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের দক্ষিণ গুথুমা শান্তিপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প ও জামবিল আশ্রয়ণ প্রকল্প। দীর্ঘ ২৬ বছর যাবত সংস্কারহীনতায় এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিটি ব্যারাকের টিনগুলো মরিচা ধরে ঝরে পড়ছে। বহু আগেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে শৌচাগারগুলো। টিউবওয়েল থাকলেও পানির দেখা মেলেনা অনেক বছর। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে না পারা সমাজের নিম্মবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষগুলো তারপরও ছাড়তে পারছেনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো। এখানে থেকে সন্তানদের নিয়ে বৃষ্টির দিনে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন তারা। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রকল্প পরিদর্শনে এসে আশ্বাস দিলেও ১৯৯৯ সালে উদ্বোধনের পর আর কোন সংস্কার কাজ এখানে হয়নি। এতে করে প্রকল্প এলাকায় বসবাসকারী অন্তত সহস্রাধিক মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। বর্ষার পানি ঘরে পড়ে তাদের জীবন দূর্বিসহ করে তোলে।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভূমিহীন, গৃহহীন এবং হতদরিদ্র মানুষের জন্য ১৯৯৭-১৯৯৮সালে পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের দক্ষিণ গুথুমা শান্তি পাড়া ও জামবিল এলাকায় দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্প স্থাপন করে তৎকালীন সরকার। শান্তি পাড়ায় ৭টি টি ব্যারেকে ৭০টি পরিবার ও জামবিল এলাকায় ৬টি ব্যারেকে ৬০টি পরিবার মাথা গোঁজার ঠিকানা পায় এসব আশ্রয় কেন্দ্রে। তৎকালীন সময়ের জনবসতিহীন পার্বত্য এলাকাসমতুল্য দেশের সীমান্তবর্তী এ এলাকায় হতদরিদ্র এসব মানুষের বসতি স্থাপনের পর এখন লোকারণ্যে ভরে উঠেছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে বসতি করেছে এসব এলাকায়। নানা সূচকে এলাকায় উন্নয়ন হচ্ছে। পাল্টে যাচ্ছে মানুষের জীবনের গতি ও আয় রোজগার। কিন্তুু দিন ফিরছেনা আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী হতদরিদ্র মানুষগুলোর। দু’একটি পরিবার আর্থিকভাবে কিছুটা স্বচ্ছতা লাভ করে আশপাশে নিজস্ব বসতি নির্মাণ করে নিজেদের পরিচয় পরিবর্তন করেছেন। যারা এখনো আশ্রয়ণের বাসিন্দা রয়েছেন তারা ঝরাজির্ণ এ ঘরে জোড়াতালি দিয়ে কোনরকুম পরিবার নিয়ে দিনাতিপাত করছেন।
আশ্রয়ণের বাসিন্দারা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ব্যারাকে ১০টি পরিবারকে সংস্থাপন করা হয়। প্রতি ব্যারাকের জন্য তৎকালীন সময়ে পৃথক শৌচাগার ও সুপেয় পানি জন্য টিউবওয়েল বসানো ছিলো। কিন্তুু কয়েক বছরের মাথায় ব্যারাকের টিনগুলো মরিচায় ধরে ঝরে ঝরে পড়তে থাকে। শৌচাগারগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়। পানি না ওঠায় চাপকলগুলোও পরিত্যাক্ত হয়ে যায়। প্রকল্পের বাসিন্দারা জনপ্রতিনিধি ও সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে আবাসন প্রকল্প এলাকায় সংস্কারের দাবী জানিয়েও কোন ব্যবস্থা পায়নি। এমতাবস্থায় নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী ঘরগুলো জোড়াতালির সংস্কার করে কোন রকুম দিনাতিপাত করছে। অনেকেই ব্যক্তিগত অর্থায়নে অগভীর নলকুপ বসিয়ে খাবার পানির ব্যবস্থা ও রিং বসিয়ে শৌচাগারের ব্যবস্থা করে দিনাতিপাত করছেন। আবার কেউ কেউ রাতের গভীরে খোলা পরিবেশে শৌচকর্ম ও অস্বাস্থ্যকর পানি ব্যবহার করে যাচ্ছেন।
প্রকল্পের বাসিন্দা সুফিয়া আক্তার জানান, সরকারী কলগুলো নস্ট থাকায় বাসিন্দাদের নিজস্ব অর্থায়নে বসানো অগভীর নলকুপগুলোতে শীতকালে পানি ওঠেনা। আর্থিক অনটনে ঘরের ছাউনির টিনগুলো মেরামত করতে পারিনি। এখন বৃষ্টি এলেই ঘরের ভেতর পানি পড়ে। বস্ত্র ও আসবাবপত্রসহ সবকিছু ভিজে একাকার হয়ে যায়। বৃষ্টির সাথে ধমকা হাওয়া আসলে সন্তানদের নিয়ে ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে থাকি। প্রকল্প এলাকার সর্দার আবুল হোসেন জানান, গুথুমার আশ্রয়ণে ৭টি শেডে ৭০ পরিবার ও জামবিল আশ্রয়ণে ৬টি শেডে ৬০টি পরিবার বসবাস করে। বছরের পর বছর প্রকল্পের শেডগুলো সংস্কার না হওয়ায় বর্ষায় এখানে বসবাসকারীদের দু:খের শেষ থাকেনা। কেউ কেউ ছাউনিতে বাঁশ, কাঠ ও প্লাস্টিক দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়া বন্ধ করার চেষ্টা করলেও ধমকা হাওয়ায় তা উড়িয়ে নিয়ে যায়। মাঝে মধ্যে জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তারা এসে প্রকল্প দেখে সংস্কারের আশ্বাস দেন। কিন্তুু এতো বছর পরও কেউ সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছেনা।
স্থানীয় বক্সমাহমুদ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর গফুর দৈনিক স্টার লাইনকে জানান, দক্ষিণ গুথুমা ও জামবিল আশ্রয়ন প্রকল্পের সমস্যার কথা কারো অজানা নয়। সম্প্রতি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে শেডগুলো সংস্কারের জন্য প্রকল্প দিতে লিখিত ভাবে আবেদন করেছি। সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলে অন্তত মানুষগুলো শান্তিতে পরিবার নিয়ে ঘুমাতে পারবে।
এদিকে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দত্ত জানান, পুরাতন আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে নতুন কোন পদক্ষেপ এই মূহুর্তে নেয়া যাচ্ছেনা। সরকার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নতুন করে ২৪টি ঘর নির্মাণ করছে। আপাতত আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান দৈনিক স্টার লাইনকে জানান, পরশুরামের দক্ষিণ গুথুমা ও জামবিল এলাকায় প্রায় দুই যুগ আগে স্থাপিত আবাসনের ঘরগুলো সংস্কার হীনতায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, এমন বিষয় কেউ আমাকে অবহিত করেনি। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!