আগামী মাসেই দরপত্র আহবানের প্রস্তুতি নিচ্ছি- চেয়ারম্যান, বিটিএমসি
মিলটি চালু হলে ফেনীর মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে- জেলা প্রশাসক
স্বপ্ন পূরণের খবর শুনে মনটা হালকা হলো- প্রাক্তন শ্রমিক
- ১৯০৩ সালে চালু হয়ে টেক্সাইল মিলটি- ১৯৬৫ সালে ২৩ একরে সম্প্রসারণ- কর্মরত ছিলেন অন্তত সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী- ২০০০ সালে প্রথম লোকসানের কবলে পড়ে এ মিল- ২০০৬ সালে নামকাওয়াস্তে দরপত্রের নামে লুটপাটের চেষ্টা- ২০১১ সালে স্থায়ী ভাবে বন্ধ ঘোষণা
নুর উল্লাহ কায়সার: দীর্ঘ ১১ বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপিএ) পদ্ধতিতে ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিল চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি এ মিলটি চালুর উদ্যোগ বাস্তবায়নে অংশীদারি হতে ফেনী ও আশপাশের এলাকার শিল্প উদ্যোক্তা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল করপোরেশন (বিটিএমসি)। ওই কর্মশালায় শিঘ্রই এটি চালুর জন্য শিল্প উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের গ্রহনের বিষয়ে অবহিত করা হয়। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এ বিষয়ে দরপত্র আহবানেরও ঘোষণা দেয় রাষ্ট্রয়ত্ব সংস্থাটি। এটি চালু হলে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ফেনীর রানীরহাট এলাকা আবার লোকারণ্য হয়ে ওঠবে। এমন খবরে মিলটির প্রাক্তণ কর্মচারী ও স্থানীয়দের মাঝে স্বস্থি নেমে এসেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯০৩ সালে ১১ একর জায়গার উপর ফেনীর কাজিরবাগ বাজার ও রানীর হাট এলাকার মাঝামাঝি স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় দোস্ত টেক্সটাইল মিল। পরে ১৯৬৫ সালে মিলটি সম্প্রসারণ করে ২৩ একর জায়গা জুড়ে বৃহৎ আকারে উৎপাদনে যায় মিলটি। তৎকালীন সময়ে এখানে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করতো। শিপ্টিং ডিউটির কারনে প্রায় সব শ্রমিকই আশপাশের এলাকায় পরিবার-স্বজন নিয়ে বসবাস করতো। এতে করে মিলটির আশপাশে গড়ে ওঠে শতশত দোকানপাট নানা রকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সৃষ্টি হয় হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। মিলটি ঘিরে ওই এলাকায় কর্মচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হতো। স্বাধীনতার পর দেশের রাষ্ট্রয়ত্ত্ব কারখানাগুলো লোকসান দিতে শুরু করলেও দোস্ত টেক্সটাইল মিলটি ছিল লাভজনক। ২০০০ সালের পর এটিও ধীরে ধীরে লোকসানের মুখে পড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে বিভিন্ন মেয়াদে ঠিকাদারি চুক্তির ভিত্তিতে মিল চালানো হয়। ওই সময়ে ঠিকাদাররা মিলে তুলা সরবরাহ করে উৎপাদিত সুতা বিক্রি করে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতেন। লোকসান শুরু হলে ২০০৬ সালে মিলটি একবার এবং ২০০৮ সালে আরও একবার বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্বল্প পরিসরে চুক্তিভিত্তিতে ২০১১ সালে ফের মিলটি চালু হলেও অল্প কিছুদিন পরই স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয় মিলটিকে।
২০০৬ সালের পর মিলটি অনিয়মিত হওয়ায় একটি অসাধু চক্র মিলটির সম্পত্তি লুটে খাওয়ার পায়তারা শুরু করে। ওই মহলের যোগসাজশে ২০০৫ সালের শেষের দিকে কর্তৃপক্ষ দোস্ত টেক্সটাইল মিলের ২১.৪৭ একর জমির মধ্যে ১২.৭১ শতক জমি তিনভাগে বিভক্ত করে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়ে দরপত্র আহ্বান করে। বিক্রি যোগ্য ভূমির উপর শতবর্ষী অন্তত ২ কোটি টাকা মূল্যের গাছ, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের আবাসিক দালান কোঠা ও নানা স্থাপনা সহ তৎকালিন সময়ে ওই দরপত্রের মূল্য অন্তত ৭০ কোটি টাকার উপরে ছিলো। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্রাদার্স ফ্লাওয়ার্স মিলস লিমিটেড গ্রেটস টোন লিমিটেড ও মীর অ্যান্ড কোং নামে ৩টি প্রতিষ্ঠান মাত্র একটি করে ৩টি দরপত্র জমা দেয়। প্রক্রিয়া শেষে প্রায় ৭০ কোটি টাকার সম্পত্তি মাত্র ২ কোটি ৭১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৮ টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়। বিষয়টি জানা জানি হলে কারখানাটির শ্রমিক-কর্মচারীরা মিলের জমি বিক্রির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। একপর্যায়ে বিটিএমসি দরপত্র বাতিল করে। এরপর দরপত্রদাতারা ২০০৭ সালে হাইকোর্টে মামলা করলে আদালত তাদের পক্ষে রায় দেয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে শ্রমিক কর্মচারীরা আপিল করলে ২০১৩ সালে দরপত্রটি বাতিল করার আদেশ দেয় আদালত। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল কাদের বলেন, এক সময়ে ফেনীর সবচেয়ে কর্মযজ্ঞ এলাকা ছিলো ফেনীর রানীর হাট ও কাজিবাগ এলাকা। এখানে ছিলো দেশের অন্যতম টেক্সটাইল মিল। এ মিলের সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিক ও তাদের স্বজন-পরিবারের সদস্যদের পদভারে পুরো এলাকা মুখোরিত ছিলো। এক সময়ে এখানকার কারখানাটির সাইরেনের আওয়াজে মানুষের ঘুম ভাংতো। আশপাশে ছিলো শতশত দোকানপাট। শহরের অন্যান্য এলাকায় তেমনকোন দালান কোঠা না থাকলেও দোস্ত টেক্সটাইল মিলের আশপাশে গড়ে উঠেছিলো ভাড়াযোগ্য বিভিন্ন আবাসিক ঘর। কিন্তু এখন এখানে কিছুই নেই। সন্ধ্যার পরই এলাকাটি এখন ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়। মিলের প্রায় ২৩ একর জুড়ে সীমানা প্রাচীরের ভেতর সবসময় থাকে ঝিঝিপোকার আওয়াজ আর শুনশান নিরবতা। এখন আর এখানে কেউ আসেনা। সাইরেনের আওয়াজও আর শোনা যায়না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, লোকসানের ভোজা মাথায় নিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিল সহ দেশের ৪টি মিলকে আধুনিকায়ন করে পূনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিলটি আধুনিক করতে খরচ হবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যে বিটিএমসি দোস্ত টেক্সটাইল মিলসহ বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলোকে যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করার বিষয়ে দেশী-বিদেশী ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সাথে আলোচনা শুরু করেছেন। আলোচনায় ইতিবাচক সাঁড়া পেলেই দরপত্র আহবান করা হবে। সরে জমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মিলটির ভেতরে থাকা কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কার্যক্রম না থাকায় কারখানাটির ভেতর এখন সন্ধ্যার পরই শুনশান নিরবতা নামে। কয়েকজন শ্রমিক-কর্মচারী আবাসিক ঘরগুলোতে বসবাস করে আসছে মানবেতর ভাবে। কেউ রিক্সা, কেউ ফেরী করেই চালায় তাদের সংসার। তারপরও তাদের আশা কোন একদিন কারখানাটি চালু হবে। আবার তাদের সুখের দিন ফিরে আসবে। কারখানাটি এখনও তাদের স্বপ্নবুনে।
ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান জানান, ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিল চালু হলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। সরকার ও উদ্যোক্তারা লাভবান হবে। মিলটি দ্রুত চালু করার বিষয়ে আমাদের ভাবনা রয়েছে।
এবিষয়ে বিটিএমসির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাকির হোসেন ফেনীর কর্মশালায় বক্তব্যকালে জানিয়েছেন, উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলা শেষে তাদের সাঁড়ার উপর নির্ভর করেই আমরা দরপত্র আহবান করবো। ফেনীর দোস্ত টেক্সটাইল মিলসহ দেশের ৪টি মিলকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চালুর জন্য আমরা পরিকল্পিত ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আশাকরি খুব শিঘ্রই পিপিপিএ পদ্ধতিতে মিলগুলো চালুর বিষয়ে আমরা সফল হবো।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!