কবি পরিচিতিবাংলা কবিতার নতুন অংশীদার কবি সোহেল মোস্তাক। উড়নচণ্ডী ছেলেটা নিজেকে গোছাতে চেয়েছিল প্রথম কাব্যে কবি জানিয়ে দিয়েছেন নিজের অবস্থান। হ্যাঁ, তিনি হালের কোলাহল থেকে সযত্নে নিজেকে দূরে রাখতে চান। সেটি যুগপৎভাবে ব্যক্তি ও শিল্পজীবনে। নিম্নকণ্ঠী এ কবি কথোপকথন ঢং—এ শিল্পের শোকার্ত অধ্যায় উন্মোচন করেন স্বনিষ্ঠ দক্ষতায়। কবি সোহেল মোস্তাকের জন্ম ২ জানুয়ারি ১৯৮৬ ইং; ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার মাটিয়াগোধা গ্রামে। তিনি ফেনী সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত রয়েছেন। কবি সোহেল মোস্তাক বিদ্যাকুটির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁদগাজী হাই স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা সম্পন্ন করেছেন। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘হেল্পিং মাইন্ড’ সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে যুক্ত। স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণমূলক সংস্থাটি ঝরেপড়া পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে। তিনি এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। চার ভাই এক বোনের মধ্যে কবি চতুর্থ। প্রথিতযশা কবি সোহেল মোস্তাকের একগুচ্ছ কবিতা নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের সাহিত্য পাতা। --বিভাগীয় সম্পাদকউড়নচণ্ডী ছেলেটা নিজেকে উড়নচণ্ডী ছেলেটা নিজেকে গোছাতে চেয়েছিল। পারেনি। তাই বলে তার কোন দুঃখবোধ নেই, তেমন না। সে ভালোবাসে অপরিচিতাকে,যে তাকে পরিচিত অন্ধকার থেকেঅপরিচিত আলোতে আনতে চায়। একজনের কাছে নিজেকে সঁপেদেয়ার ইচ্ছা একটা অদ্ভুত নেশা।ছেলেটার নেশার ঘোর কাটে না। সে স্বাধীনতার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। স্বাধীনতাহীনতায় স্বস্তিতে থাকতে পারে না।একদিন পেছনে ফিরেএকদিন পেছনে ফিরে কোনো আফসোস করবে না,যাপিত জীবনের সব কষ্ট সেদিন উবে যাবে, ‘বেঁচেছিলে’ এই ভেবেই শুধু সুখ পাবে।ভালোবাসার জন্য গাছের কাছে যেতে হবে না, গোলাপে কাঁটা থাকে ভুলে গেলেও কিচ্ছু হবে না। প্রিয়জনকে গোলাপ কিংবা গ্ল্যাডিওলাসে শুভেচ্ছা পাঠাতে হবে না, একদিন কাউকে তার জন্মদিনেজোর করে বাইরে নিয়ে যেতে হবে না।একদিন শুধু স্মৃতির চাদর গায়ে জড়িয়ে সময় পার করে দেবে ,অথবা বেহেস্তে তোমার ভালো লাগবে না ভেবে থাকতে চাইবে নাএবং এতো আতিশয্য ভালো লাগছে না বলে পৃথিবী ফেরত চাইবে।একদিন রাস্তার মোড়ে একদিন রাস্তার মোড়ে রিকসা হয়ে অপেক্ষা করবো, এক সকালে শিশির হয়ে তোমার পা ভিজিয়ে দেবোতারপর ক্লাসরুমের হোয়াইট বোর্ড হয়ে যাবো।তুমি অপলক তাকিয়ে থাকবে,শিক্ষক লিখবে, মুছবে, ব্যাখ্যা করবে,তুমি মাথায় কিংবা খাতায় না-নিয়ে মনে মনে স্বপ্ন বুনবে।-এই তুমি বুঝেছো; বললে মাথা নাড়বে,জিজ্ঞেস করলে নিরুত্তর তাকিয়ে থাকবে।ক্ষমা করে দেবেক্ষমা করে দেবে এই বিশ্বাসে বেঁচে আছি, নয়তো জন্মেই নিষ্পাপ চলে যেতে চাইতাম।আস্তিকের মাঝে মাঝে মনে হয়মরে গেলে তারপর সে কত অসহায়;নাস্তিক ভাবে তার উল্টো।তার ভাবনায় মৃত্যু ঘুমের মত। স্বর্গ-নরক ওসব কি কেউ দেখেছে; কেউ কি এখনো ফিরে এসেছে ওপার থেকে!মৃত্যু তার কাছে অনন্ত নিদ্রা, আস্তিকের সাথে ইবলিশের নিত্য দ্বন্দ্ব,প্রতি পদে পদে প্রতারণার ফাঁদ তার জন্য পাতা থাকে। তবুও ভাববাদী বিশ্বে আমি একে বিশ্বাসী, কে তুমি পরাজিত করবে-কোন্ অবিশ্বাসী? জেনে-শুনে কাটাই সময় জেনে- শুনে কাটাই সময়ওপারের কিছুই দেখা হয় নাই,শুধু বিশ্বাসের লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটি।জীবন শুধুই কাদামাটি তার উপর শিল্পীর ছোঁয়া নাটকের পরে নাটক।মঞ্চ ছেড়েও মঞ্চেই পড়ে রই,তুমি অনন্ত নির্দেশক তুমিই অনুঘটক।যে সংসারী হয়নিযে সংসারী হয়নি, তাকে একটু আধটু চিনি।যে বৈষয়িক হতে পারেনিতাকে কেউ বোঝেনি।পুঁজিবাদী পৃথিবীতে সে আগন্তুক,নিভৃতচারী নায়ক,তুমি তাকে কখনো দেখোনিকারণ তোমার চোখ নেই।তোমাকে অন্ধ বলছি নাঅন্ধ এই সময়সমাজ, দেশ ওরাজনীতি।এই নিষ্ফলা মাঠেসে প্রান্তিক কৃষক,তোমার জন্য তার সর্বস্বতোমার জন্যই হয় সে নিঃস্ব।মধ্যবর্তী স্টেশনে ট্রেন বদল করিনিমধ্যবর্তী স্টেশনে ট্রেন বদল করিনি,এক জীবনে সব জায়গায় জিততেও চাইনি। সবার কাছে প্রিয় হতেও না,ভালোবাসতেও না।আমি শুধু উপরে ও পাশে সাড়ে তিন হাত জায়গা চেয়েছি।না, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বা ওয়াক্ফ করে কিছু চাইনি।আর আমি তোমাকে চেয়েছি,কারণ তুমি ছাড়া আমি ভীষণ একাকী।আমি একনায়কতন্ত্র চাই-ভালোবাসায়,গণতন্ত্র চাই- প্রতিদিনকার বেঁচে থাকায়।লোকটা নিজের ছবি দেখেলোকটা নিজের ছবি দেখেআর ভাবে,এ পর্যন্ত কতটা বুড়িয়েছে সে।মানুষ;তুমিতো থেমে থাকতে চাও না,তবে বয়স বাড়বে কেন মেনে নাও না!প্রতিদিন ছবিটা একটু একটু করে বদলায়,স্বল্পদৈর্ঘ্য স্বপ্ন ভাঙতে থাকেযাচ্ছেতাই একটা জীবন তার হয়ে যায় ! একদিন যাপিত জীবন নিয়ে সেতৃপ্তির ঢেকুর তোলে,হালখাতা খুলে জীবনের যোগ ও বিয়োগের।একজন ব্যর্থ মানুষের গল্প ১.একজন ব্যর্থ মানুষের গল্প কেউ জানে নাপাহাড়ের ব্যথার কান্নাকে ঝর্ণাআকাশের নীরকে বৃষ্টি ভেবেপ্রতিনিয়ত ভুল করেই যাচ্ছি। অথচ ঝর্ণা ও বৃষ্টি নিয়ে কতো কবিতা লেখা হলো ,কেউ বুঝলো না এসবের আড়ালেশত সহস্র যন্ত্রণা।২.ওইখানে শুয়ে আছে বাবাতার মায়ের পাশে বাম পাশটা খালি খালি পড়ে আছে বিশাল বিছানা আমরা প্রতীক্ষায় আছি শয্যাসঙ্গী হবো বলেÑ তবু ভুলে যাই,মেতে থাকি মর্তে ।এই যেমন ধরুনএই যেমন ধরুন,আপনি কবিতা পড়বেনভেবে প্রথম লাইনটা শেষ করলেন। কিন্তু একটা বিষয় কি লক্ষ্য করলেন ?দ্বিতীয় লাইনেও কিছুই পেলেন না।কবিতা সবসময় সহজ ভাব, ভাষা বা বোধগম্য না-ও হতে পারে; তাকে নিয়মের রেখা টেনে গতিরোধ করাআদৌ সম্ভব কিনা জানি না। তাই কবিতা আমার কাছে ভাবের গাঙে ডিঙিনৌকায় পারাপার, মধ্যরাতে ঘুমের ঘোরেকিছুদূর পায়ে হেঁটে আবার ঘুমানো, কিংবা প্রেম ও ঘৃণার মাঝে চুপি চুপি বসতি স্থাপনের বায়নাপত্র। জরিমানাসহ টুকরো টুকরো স্মৃতির উদগীরণ।না, কবিতা পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া সম্পত্তির খাজনা অথবা কারো ফেলে যাওয়া ভালোবাসাকেসাদরে নিজের বাসায় তোলা, তার সাথে বসতি স্থাপনের কৃত্রিম এক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। দেখুন না, শেষ লাইনেও শেষ হলো না অসংজ্ঞায়িত কবিতার সংজ্ঞা!হাজার কামরার হেরেমে হাজার কামরার হেরেমেমোঘল মহারাজের মত বৈচিত্র চাই না,টিথোনাসের মত অনন্ততার তারুণ্য মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষাও কাম্য নয়।কিংবা কেউ কেউ যারা ক্লান্ত হয়ে যায় এক জীবনে এক মানুষে তাদের মতোও না, আবার যারা থোড়াই কেয়ার করে এইসব সম্পর্কের সমীকরণ তাদের দলেরও আমি কেউ না। আমি চাই না অদৃশ্য কোনো আপোষনামা জৈবনিক বন্ধন অথবা আনবিক গঠন, জীবনের রসায়নের জটিল সমীকরণ, এসব আমি আদতেই কিচ্ছু বুঝি না।আমাকে করুণা করতে চাইলে সুযোগ পাবে না,অকারণ অনুনয় দয়া-দাক্ষিণ্য একেবারেই অপছন্দ,কারো প্রেমে মশগুল কাউকেও না,শুধু তোমাকেই চাই যার দেখা আজও কল্পনা । তোমাকে হতে হবে না অসূর্যস্পর্শাকিংবা অতি রক্ষণশীলা,তোমার কবিতা বুঝতে হবে না তবে জানা থাকা চাই জীবনের ছন্দ, তাল ও লয়। না, তোমাকে অপ্সরী হতে হবে না, তবে মেনে নেয়া চাই আটপৌরে বাঙালিয়ানা,কেননা অমৃতে আমার আজন্ম অরুচি, খুব সাধারণভাবে অসাধারণ কাউকে আমার চাই।আর কত প্রতীক্ষার পর১.আর কত প্রতীক্ষার পর কেউ বলবে,শুধু তোমার জন্য এই গোলাপ। ভুল বলছি না, এক জীবনে ফুল দেয়া হয়নি তোমাকে, দেবো বলে আর কিছু বলবো না, তবে আত্মপ্রচার হয়ে যাবে,তুমি এলে পরে বাকি জীবনের গল্প শুনবে।এই মুহূর্তে ধ্রুপদী অস্পষ্টতায় থেকে যাক বিগত জীবনের গল্প, তুমি না-হয় প্রত্নতাত্ত্বিকের মতো খোঁজ করো প্রিয়তমের অতীত, কিংবা হস্তরেখাবিদের কাছে হাত দেখাতে পারো,ভালোবেসে যেতে পারো পরিমাপ করে।২.আউলার আকাশে আজন্ম আলো ধারাবাহিক প্রেমালাপ, দুঃখহীন দিনদক্ষিণমুখী ফ্ল্যাট, রতিক্লান্ত রাত ভাবলেশহীন ভালোবাসা।বাউল জীবন পরিব্রাজকের, স্বপ্নেরা উড়ু উড়ু,চাহিদা বলতে খেয়ে পরে বাঁচা এটুকুই।কিন্তু নাটাই হাতে কে তুমি?কে তুমি চেয়ে আছ অনন্তকাল? সেই শুরু থেকে খেলে যাচ্ছ আড়ালে, সবাইকে আউল ও বাউলের বেশে, ঘুরাচ্ছো স্বপ্নের দেশ ও বিদেশে।কে তুমি নাটাইওয়ালা, কেন এই অদ্ভুত পিপাসা?
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!