শিহাব উদ্দিন:
১। বিলম্ব হলেও ব্যাচমেট ও সহকর্মী কবি সোহেল মোস্তাক এর প্রথম প্রকাশিত কাব্য “উড়নচণ্ডী ছেলেটা নিজেকে গোছাতে চেয়েছিল” এর প্রায় সবকটি কবিতা পড়া হয়েছে। কবির বদনের সাথে তাঁর কবিতার বচনের চমৎকার মিল রয়েছে। উভয়ই innocent; উভয়ই মায়াবী; উভয়ই চাঁদের মত।
২। একজন কবির প্রতিভা যত বেশি তার বিচরণের ক্ষেত্র তত ব্যাপক। কবি সোহেল মোস্তাকের কাব্যে কী নেই! তিনি লিখেছেন প্রেমের কবিতা :
হয়তো কোনো এক সকালে
তোমার সাথে দেখা হবে,
রেলগাড়িতে আসন খুঁজতে খুজতে
তোমার পাশে গিয়ে বসব।
তিনি লিখেছেন স্বপ্ন নিয়ে : “স্বপ্নের হাটে একবার দেখা হয়েছিল, / খামখেয়ালির চোখ তখনও স্থির হয়নি।“ তিনি লিখেছেন ধর্ম নিয়ে : “আস্তিকের সাথে ইবলিশের নিত্য দ্বন্দ্ব,/ প্রতি পদে পদে প্রতারণার ফাঁদ তার জন্য পাতা থাকে।/ তবুও ভাববাদী বিশ্বে আমি এক বিশ্বাসী।“ তাঁর কবিতায় পাওয়া যায় mysticism: “জীবন শুধুই কাদামাটি/ তার উপর শিল্পীর ছোঁয়া/ নাটকের পরে নাটক।“ রাজনৈতিক দর্শনও পাওয়া যায় তাঁর কবিতায় : “আমি একনায়কতন্ত্র চাই--/ ভালোবাসায়,/ গণতন্ত্র চাই—প্রতিদিনকার বেঁচে থাকায়।“ নারীবাদ নিয়েও লিখতে ছাড়েন নি আমাদের তরুণ কবি : “তুমি বের হবে দিনে এবং রাতে,/ নিজের পাওনা বুঝে নিতে।“ কবি পাঠকদের মাঝে motivation সৃষ্টি করতে সজাগ ছিলেন : “এ গ্রহে শেষ বলে কিছু নাই,/ পথের শেষেই পথ পাতা থাকে,/ শুধু খুঁজে নিয়ে পা বাড়াতে হয়।“ আবার তিনি কবিতার স্টাইলে গল্পও শুনালেন পাঠকদের (“একজন ব্যর্থ মানুষের গল্প” কবিতা )। কবিতার নতুন এবং অসাধারণ সংজ্ঞাও পাওয়া যায় সোহেল মোস্তাকের কবিতায় : “কবিতা আমার কাছে ভাবের গাঙে ডিঙিনৌকায় পারাপার...” কবি লিখেছেন বাস্তবতা নিয়ে (“হাসপাতালে রোগী” কবিতা)। আবার তিনি বিচরণ করেছেন কল্পনার জগতে: “একদিন রাস্তার মোড়ে রিক্সা হয়ে অপেক্ষা করব/ এক সকালে শিশির হয়ে তোমার পা ভিজিয়ে দেব।“ Terry Eagleton তাঁর “Literary Theory” বইয়ের “The Rise of English” অধ্যায়ে লিখেছেন, বাস্তব বিষয় নিয়ে লেখা যতটা সহজ কাল্পনিক বিষয় নিয়ে লেখা ততটা সহজ নয়। ফেনী কলেজকে নিয়ে পাঁচটা বাক্য লিখতে বলা হলে কলেজের সব ছাত্রছাত্রী লিখতে পারবে। কিন্তু নেপচুন গ্রহের কাল্পনিক বাসিন্দাদের নিয়ে কাল্পনিক পাঁচটা বাক্য লিখতে বলা হলে অনেকে হিমশিম খাবে।
৩। কবি সোহেল মোস্তাকের প্রথম কাব্যের প্রায় সবগুলো কবিতাই আত্নজীবনীমূলক। অন্য কথায়, কবিতাগুলো lyric এবং subjective. কবির পাঠকদের বড় একটা অংশ যেহেতু তরুণ ছাত্রছাত্রী, আমি তাঁকে অনুরোধ করব ছাত্রদের হোস্টেল লাইফ, ব্যাচেলর লাইফ, টিউশন, কলেজ-ক্লাস, ক্যারিয়ার টেনশন, হতাশা, ছাত্রছাত্রীদের বিয়ে, বিয়ের পর পড়াশুনায় সমস্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে objective কবিতা লেখার জন্য। কবির ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া দুই-তিন লাইনের অণুকাব্যগুলো আরো চমৎকার। সামনে কবির অণুকাব্যের বই বের হলে আমরা উনাকে অণুকবি হিসেবে স্বীকৃত দেব।
৪। S. T. Coleridge তার “Biographia Literaria” তে দুই ধরনের imagination এর কথা বলেছেন—primary and secondary. Coleridge এর মতে, মানুষ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যে ধারণা লাভ করে তাই primary imagination. এ imagination সবার আছে। অপরপক্ষে, secondary imagination সকলের থাকে না। যাদের secondary imagination থাকে তারা primary imagination কে শৈল্পিক উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন। কবিদের এ বিরল secondary imagination থাকে। তাই তারা বিভিন্ন বিষয়কে কাব্যিক সৌন্দর্যে সাজিয়ে পরিবেশন করতে পারেন। আমাদের কবি সোহেল মোস্তাক সেসব ব্যক্তিদের একজন যারা secondary imagination এর অধিকারী। ( উল্লেখ্য, অনেক আগে আমার নিজেরও একবার কবি হবার প্রবল ইচ্ছা জেগে উঠেছিল। অনেক কষ্টে দু’টো লাইন লিখেছিলাম কিন্তু তৃতীয় লাইনটা অনেক চেষ্টা করেও আর লিখতে পারলাম না। অবশেষে বুঝতে পারলাম আমার মধ্যে secondary imagination এর অভাব রয়েছে এবং হাল ছেড়ে দিলাম। )
৫। কবিতা সাহিত্যের উচ্চতর ধরন। কবিতা সবাই পছন্দ করেন না। আসলে কবিতা বুঝার জন্য, কবিতার রস উপভোগ করার জন্য মননের ও চিন্তার গভীরতা লাগে যা সবার থাকে না। কিন্তু কবিতার মধ্যে একবার আনন্দ খুঁজে পেলে, কবিতার প্রতিটা লাইনে অমৃতের স্বাদ পাওয়া যায়।
৬। প্রমথ চৌধুরী তাঁর “বই পড়া” প্রবন্ধে লিখেছেন, “মনকে সরল, সচল, সরাগ ও সমৃদ্ধ করার ভার আজকের দিনে সাহিত্যের উপরও ন্যস্ত হয়েছে।“ যেহেতু কবিতা সাহিত্যের অন্যতম শাখা, হৃদয়কে সমৃদ্ধ করার জন্য আমরা কবিতা পড়তে পারি। যারা সাহিত্য ভালোবাসেন তাঁরা কবি সোহেল মোস্তাকের বইটা কিনে নিয়ে পড়লে দেওলিয়া হবেন না নিশ্চিত।
লেখক : জ্যেষ্ঠ প্রভাষক
ইংরেজি বিভাগ
ফেনী সরকারি কলেজ।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!