নজরুল বিন মাহমুদুল: স্বপ্ন মানুষকে বাঁচতে শেখায়, দেখায় আলোর পথ। কিছু স্বপ্ন মানুষের জীবনকে বদলে দেয় আর কিছু স্বপ্ন মানুষের জীবিকা নির্বাহের পথ দেখায়। স্টার লাইন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্টার লাইন ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড’র ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডের মাধ্যমে আবারও পুড়ল হাজারো শ্রমিকের স্বপ্ন। যাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গত ২৫ মার্চ, শুক্রবার ফেনীর কাশিমপুরে অবস্থিত স্টার লাইন ফুড ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনা। ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় দীর্ঘ ৩২ ঘন্টায় ফেনী ও পাশর্^বর্তী জেলার ১০ টি স্টেশনের ১৫ টি গাড়ি ও ১৫ টি পাম্প এবং শতাধিক ফায়ার ফাইটারের রুদ্ধশ^াস অভিযান শেষে স্টার লাইন ফুড ফ্যাক্টরির আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ফুড ফ্যাক্টরিতে কর্মরত ছিল ৩ হাজারের অধিক শ্রমিক। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিতেও এমন মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী হয়েছিল হাজারো শ্রমিক।
আগুনে পুড়ার একদিন আগেও ফ্যাক্টরির কর্মকান্ড স্বাভাবিক ছিল। আসন্ন রমজান কে উপলক্ষ করে শ্রমিকরা খোশ মেজাজে ছিল। পরের দিন শুক্রবার দুপুর ১ টা ২৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ কয়েকজন নিরাপত্তা প্রহরী আগুন আগুন বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ল গোটা ফ্যাক্টরিতে। নিরাপত্তা প্রহরীদের আপ্রাণ চেষ্টা করে আগুন নিভাতে। কিন্তু না, আগুনের লেলিহান শিখা যেন তাদের কাছেই ভীড়তে দিচ্ছে না। হতাশাগ্রস্থ সকল নিরাপত্তা প্রহরীরা আফসোস করতে করতে ফ্যাক্টরি থেকে বেরিয়ে এলো। দূর থেকে জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম এই ফুড ফ্যাক্টরি পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা ছাড়া যেন কিছুই করার ছিল না। সাথে সাথে ফেনী ফায়ার সার্ভিস আগুন লাগার বিষয়ে জানানো হলে তারা তাৎক্ষণিক অগ্নি নির্বাপনের কাজ শুরু করে।
অগ্নিকাণ্ডের কিছুক্ষণ পর উপস্থিত হাজারো শ্রমিকের কান্না আর আহাজারিতে আকাশ বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠেছিল। নিজের স্বপ্ন আর পরিবারের স্বপ্ন পূরণের এই ফুড ফ্যাক্টরি যেন ক্রমশই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মত রুপ ধারণ করছে। সামনে রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতর আসন্ন। ছেলে মেয়েরা আগে থেকেই আবদার করে রেখেছিল এবার কিন্তু নতুন জামা কিনে দিতে হবে। বাবা-মা অতি আশাবাদী হয়ে আশ্বাস দিয়েছিল যে, বেতন হাতে পাওয়া মাত্রই তোমাদের নতুন জামা কিনে দিবো। সেই আবদার ও আশ্বাস আজ অনিশ্চিত। ভয়াবহ অগ্নিকান্ড সব আবদার আর আশ্বাসকে হতাশায় পরিণত করেছে।
মোঃ মিজানুর রহমান নামে এক শ্রমিক জানান, আমি দীর্ঘ ৬ বছর যাবত স্টার লাইন ফুড ফ্যাক্টরিতে কর্মরত আছি। দীর্ঘ এই সময়ে মালিক পক্ষের আচরণ, সুন্দর ব্যবস্থাপনা ও আশানুরূপ সুযোগ সুবিধা থাকায় এই ফুড ফ্যাক্টরিতে এখনও কর্মরত আছি। দীর্ঘ এই সময়ের ব্যবধানে আমি এই ফুড ফ্যাক্টরি থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। শুধু বেতন ভাতা নয় বরং ঈদ বোনাস ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করতাম। এসব শুধু আমার জন্য নয়। এখানে কর্মরত এমন হাজারো শ্রমিকের ভরসাস্থল ছিল এই ফুড ফ্যাক্টরি। গত বছরও এই ফুড ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে করে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়ি। কিন্তু মালিক পক্ষের আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় অল্প সময়ের মধ্যে আবারও কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। আগের ক্ষতিপূরণ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমাদের ব্যথিত করেছে। এবারের অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা গতবারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। আবারও আমরা কর্মহীন হয়ে পড়লাম। সামনে রমজান ও ঈদ আসন্ন। আমাদের পরিবার ও ছেলে সন্তানদের কি উপায় হবে। আমরা চাই আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসুক স্টার লাইন ফুড ফ্যাক্টরিতে। স্টার লাইন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান জাফর উদ্দিন আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠান। স্বপ্ন আর ভালবাসায় প্রতিষ্ঠানটি এভাবে ভূষ্মিভূত হবে কখনো ভাবিনি। বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রতিষ্ঠানটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আসন্ন রমজান ও ঈদকে উপলক্ষ করে অনেক পণ্য দ্রব্য গোডাউনে মজুদ ছিল। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশে^র কয়েকটি দেশে পণ্য রপ্তানি করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডে সব কিছু লন্ডবন্ড হয়ে গেল। গত বছরের অগ্নিকাণ্ড ও করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড যেন সব শেষ করেই দিলো। আল্লাহর রহমত, আমার মায়ের দোয়া, ফেনী ও দেশবাসীর দোয়ায় আমরা আবার ঘুরে দাড়াঁবো ইনশাআল্লাহ।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!