আমীর মোহাম্মদ খান: শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে বাংলাদেশে বসে কিছু লিখতে গেলে প্রশ্ন এসে যায়, ‘আসলে শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে আমরা কি বুঝি ? ৯০ এর দশকে আমরা যখন পড়াশুনা শুরু করি তখন শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাচুর্য জিনিসটা খুব একটা উপস্থিত ছিলনা, যতটা ছিল নিষ্ঠা ও একাগ্রতা এবং মূল্যবোধের উজ্জীবন। আর্থিক টানাপোড়নে বিষয়টা শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে ‘অধ্যবসায়’ শব্দটা একীভূত করতে অপরিসীম ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। সকালে পান্তা-লবণ খেয়ে সরাদিন না খেয়ে থেকে কিংবা উপচে পেট খেয়ে ‘এনালগ’ পদ্ধতির যে পড়াশোনা তার মধ্যে আমরা প্রকৃত শিক্ষালাভ করেছি বলে বারংবার দাবি উঠলেও শরৎবাবুর মা ‘স্বরস্বতী’ এতে কতটুকু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন কিংবা নজরুলের ‘অযুত আঁখির নিযুত চাহনি’ এতে কতটুকু লক্ষ্য পূরণে সক্ষম সে প্রশ্ন এসে যায় যখন নিয়ত পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক জরিপ-সূচকে আমরা বরাবরই তলানিতে অবস্থান নিই এবং সম্মুখ অগ্রসরতার চাইতে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামঝি সময়ে হা-হুতাশে থাকা ইংরেজ কবি টি এস ইলিওটের জাতি বিনাশের বর্ণনায় সান্ত¡না খুজে পাই। ‘পাঠ্যবইয়ের পড়াশুনা আসল নাকি গাইড বই ধ্বংস আনে’, ‘মুখস্থবিদ্যার আসলও আধুনিক পড়াশুনার স্বরূপ, ‘ডান-বাম', ’মার্কস— লেনিন’ এসব চরম অমিমাংসিত দ্বন্দ্ব এবং ‘লাইব্রেরীর পড়াশুনা' ও ‘আলোকিত আরাধনা’, 'সাধনা এবং পড়াশুনা’ নিয়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত সমাজের আর্তনাদ, সব শেষে বি.এ ডিগ্রি নিয়ে মাস্টারি পেশায় আত্মনিয়োগ করে সংসার জীবন আরম্ভ-এমন কিছু অতি সাধারণ চিত্র আমরা পাব আমাদের পড়াশুনার ৯০ এর দশক সময়ে। এর মধ্য থেকে গুটিকয়েক অতি সন্ন্য্সাী ছাত্র গ্রাম-মফস্বল ও নিজ জেলার গ-ি পেরিয়ে দেশ এবং বিদেশে পাড়ি জমিয়ে ইতিহাসের অংশ হয়। ‘এনালগ’ দুর্নীতিতে সদর্পে ‘প্রথম শ্রেনিতে প্রথম’ হয়ে মুখস্থবিদ্যার আধুনিক প্রক্রিয়ায় গতানুগতিক ধারার বক্তব্য দিয়ে ‘বাহ বাহ’ সাড়া জাগিয়ে জাতিকে একক্রোশ সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় বারংবার দেখালেও আমাদের অপ্রিয় জরিপ-সূচক নাছোড়বান্দা হয়ে নিম্নগামিতার কোন ব্যতিক্রম না দেখালে সেই হা-হুতাশ জাতীয় নিত্যসঙ্গী হওয়া ব্যতীত অন্যকিছু না আসলেও কৃষক এবং শ্রমিক সমাজ কোন সুশিক্ষিত বা সশিক্ষিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় না গিয়ে কেবল ঘাম-ঝরানোর প্রক্রিয়ায় দেশকে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় জরিপে একছোলা উপরের দিকে নিয়ে গেলে আবারও শিক্ষিত সমাজ অর্জিত-আহরিত জ্ঞানে পুরো জাতিকে তথ্য— উপাত্ত পরিসংখ্যান প্রক্রিয়াজাত করে সামনের দূর্বার গতি ধারণ করতে চায়, পরক্ষণে সেই প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি জাতিকে কল্পনা করে আরেক দফা অর্জিত বিদ্যাভারে নুব্জ হয়ে বিরুদ্ধ মতের সমালোচনায় মুখর হয়।সময় গড়িয়ে আমরা এক সময় আবিষ্কার করি অশিক্ষিত মানুষ বলতে সমাজে একটিও খুজে নেওয়া দুষ্কর। বই-পুস্তক, ছেড়া ফাটা সংগ্রহ ও ফটোকপি করার দিনশেষ আর আমরা সকল আধুনিক মানুষ উন্নত বিশ্বের মত কোন কাগজপত্রে হাত না দিয়েই মেশিন নির্ভর পড়াশুনার কৌশলে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি (মা সরস্বতী এবার খুশি কি না), শ’য়ে শ’য়ে বৈদেশিক বৃত্তি নিয়ে বিদেশ যাত্রা করি, শ’য়ে শ’য়ে প্রকাশনা প্রকাশিত হয়ে আবিষ্কার করি যা কিছু পশ্চাৎপদ ছিল তা শুধু কাগজি বই এবং কাগজি বই পড়ে সময় নষ্ট করার কারণে; এহেন সময়ে যখন বার্তা আসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মমি করে রাখতে হবে অতি শিগগির, তখন পড়াশুনা এবং শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর নতুন বাজেট প্রণয়ন করি; পথিমধ্যে শুনতে পাই শিক্ষিতমানুষের বৈদশিক মুদ্রা অর্জন আর শ্রমিক সমাজের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের চিত্র আকাশে—পাতালে সমান তখন আবার ও মূল্যবান বক্তব্য দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকে।পরিশেষে, শিক্ষাব্যবস্থা এগুচ্ছে মন্থরগতিতে, বিংশ শতাব্দীর শুরুর যে পড়াশুনার ব্যবস্থা তা থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে বলে আমার বিশ্বাস। অনলাইন ভিত্তিক পড়াশুনা, পড়াশুনার সহজ প্রাপ্যতা, লৌকিকতা ইত্যাদির কারণে শিক্ষার্থীরা ‘সাধনা’ বিষয়টির সাথে পরিচিত হতে পারছে না যে বিষয়টা এনালগ যুগে ছিলো বলে আমরা জানি। আধুনিক পড়াশুনার ব্যবস্থা অপরিহার্য হওয়া সত্ত্বেও আমাদের লক্ষ রাখতে হবে ‘সাধনায় পাঠগ্রহণ’ হচ্ছে নাকি ‘সংক্ষিপ্ত পথে সনদ অর্জন’ হচ্ছে সর্বোপরি, ‘বিশেষ বিবেচনায় পাশ’কিনা। এই “বিশেষ বিবেচনায় পাশ’ প্রজন্ম এনালগ যুগের ‘বিশেষ বিবেচনায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম’ প্রজন্মের মত জাতি বিনাশের ক্ষমতা না রাখলেও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সুস্থ-স্বাভাবিক সংস্কৃতি দেশে কতটুকু বিরাজমান তা উপলব্ধি করা শিক্ষা-বাজেট প্রণয়নের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ। আশাবাদী মানুষ হিসেবে শিক্ষা ব্যবস্থার আলোকিত সুস্থ দিন প্রত্যাশা করছি।লেখক: সহকারি অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগবাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট, নিলফামারি।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!