মো: কামরুল হাসান: গন্তব্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ সুমদ্র সৈকত কক্সবাজার। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার আনুমানিক রাত নয়টার দিকে একটা হ্যান্ড বেগের মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাহির হলাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। পূর্বে থেকে দৈনিক স্টার লাইন পত্রিকার সহ-সম্পাদক নজরুল বিন মাহমুদুল ভাই সবাইকে ফোন করে বলেছিলেন, শুক্রবার রাত দশটার মধ্যে যেনে সকল প্রতিনিধিবৃন্দ পত্রিকার প্রধান অফিসে অবস্থান করে। কেননা ওই দিন রাত সাড়ে ১১ টার জন্য স্টার লাইন স্পেশালের টিকেট বুকিং ছিল।
যাইহোক! আমরা দৈনিক স্টার লাইন পরিবারের ১০ জন শব্দযোদ্ধা রাত সাড়ে দশটায় পত্রিকার প্রধান অফিস থেকে বের হয়ে মহিপাল স্টার লাইন স্পেশাল কাউন্টারে পৌছাই। পূর্বে থেকে পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক জসিম মাহমুদ ভাইয়ের দিকনির্দেশনায় পত্রিকার সকল প্রতিনিধির জন্য টিকেট সংগ্রহ করেন সহকর্মী জুলফিকার আলম ভাই।
এরপর জসিম ভাই ও বার্তা সম্পাদক নুর উল্লাহ কায়সার ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা রাত সাড়ে এগারোটায় স্টার লাইন এসি গাড়িতে উঠলাম। শুরু হলো আমাদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আনন্দ ভ্রমণের যাত্রা।
বাস যখন চলা শুরু করলো তখন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো যেন শাঁ শাঁ শব্দে তার উল্টো দিকে দৌঁড়াচ্ছে। যাইহোক! আমাদের বহনকারী গাড়িটি রাত তিনটায় পথে ২০ মিনিটের একটা যাত্রা বিরতি দিলো। গাড়ির সুপারভাইজার বললেন, সবাই প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আবার গাড়িতে উঠতে। আমরাও সবাই নেমে যে যার প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিলাম। এরপর আমাদের সাথে থাকা পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক জসিম ভাই সবাইকে নিয়ে নাস্তা করালেন। নাস্তা শেষে আবারও গাড়িতে উঠে পড়লাম। গাড়িটা চলা শুরু করলো। ভোর পাঁচটা নাগাদ আমরা কক্সবাজারের ডলফিন মোড় পেরিয়ে সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে পোঁছালাম। একে একে আমরা স্টার লাইন পরিবারের সবাই গাড়ি থেকে নেমে হাটা শুরু করলাম সানসেট রিসোর্টের দিকে। সেখানে আগে থেকে আমাদের জন্য জসিম মাহমুদ ভাই তিনটি রুম ঠিক করে নিলেন। সবাই রিসোর্টে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়লাম। শনিবার সকাল ৯টায় ডাক এলো নাস্তা সেরে বিচে যাওয়ার। সবাই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে একটি রেস্টুরেন্টে নাস্তা করে ১০ টার সময় জসিম ভাই ও কায়সার ভাইয়ের নেতৃত্বে দুটি অটোরিকশা নিয়ে আমরা চলে গেলাম সুগন্ধা বিচে। সেখানে সবাই হই হুল্লোড় করে কিছু গ্রুপ ছবি তুলে। এরপর সাগরের জলতরঙ্গ ঢেউয়ের সাথে নিজের গাঁ ভাসাতে সবাই আনন্দে মেতে উঠে। কেউ টিউব নিয়ে নিয়ে সাগরে নেমে যায় আবার কেউবা সমুদ্রের বালুকনায় খালি পাঁয়ে হাটাহাটি শুরু করে। বিচে প্রায় তিনঘণ্টা থাকার পর সবাই চলে গেলাম রিসোর্টে। সেখানে গোসল
সেরে দুপুরের খাবারের জন্য জসিম ভাই সবাইকে ডাকলেন। বের হয়ে ঢাকা রেস্তোরাঁ নামে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিলাম। এরপর আবার রিসোর্টে গিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম। বিকেলে রিসোর্টে আমাদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা রিয়াজ নামের একটা ছেলেকে দিয়ে জসিম ভাই গরম গরম পেঁয়াজু, আলুর চপ এবং চাঁ নিয়ে নিয়ে আসলেন। বিকালের নাস্তা করার পর আবারও জসিম মাহমুদ ভাই সবাইকে নিয়ে বিচে গেলেন। সূর্যাস্ত ডোবা দেখা ও সেখানে নাচ গানের আনন্দে মেতে উঠার জন্য। যাইহোক! বিচে গিয়ে দেখা যায় সাগরে জোয়ার শেষে ভাটা পড়ে গেছে। সাগরের বিশাল জলরাশির দক্ষিন থেকে হিমেল বাতাস এসে আমাদের মন ছুঁয়ে দিলো এক পলকে। সন্ধ্যার পর কেউ পরিবারের জন্য বার্মিজ মার্কেটে কেনাটাকায় ব্যস্ত। আবার কেউ মুক্ত বাতাসে হারিয়ে যাচ্ছে কোন এক অজানা গাঁয়ে। এরইমধ্যে আমাদের সকলের প্রিয় জসিম মাহমুদ ভাই গলা ছেড়ে ধরলেন আসিবে বলে কথাটা দিলে, তুমি আমি মুখোমুখি বসে দুজন, তোর মনের পিঞ্জিরায় তুই কারে দিলি ঠাই, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলাসহ আরো কয়েকটি জনপ্রিয় গান। গানের সুর যতদূর যায় তার গান ও সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধ হয়ে চোখের সামনে ছুটে আসে অনেক ভ্রমণ পিয়াসু গানপ্রিয় প্রেমিক। জসিম ভাইয়ের গাওয়া সেই গানগুলো অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করে ছড়িয়ে দেয় পুরো পৃথিবী জুড়ে। সেখানে আরো গান গেয়ে আমাদের আনন্দ ভ্রমনটাকে প্রানবন্ত করে তোলেন দৈনিক স্টার লাইন’র বার্তা সম্পাদক কায়সার ভাই, সহ-সম্পাদক নজরুল ভাই, এসএন আফসার, মাষ্টার শাহ আলম, কবির আহাম্মদ নাছির, সুজন, ফয়সাল, জুলফিকারসহ প্রতিনিধি ভাইয়েরা। রাত দশটার দিকে সবাই হুই হুল্লোড় শেষে আবারও রিসোর্টে ফিরে এলাম। ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবারের পালা। সেটাও কাঁশবন রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিলাম।
এরপর দু'একজন ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমে বিভোর, বাকীরা কায়সার ভাইয়ের সাথে কক্সবাজার শহরের ভিতর দিয়ে আঁকাবাঁকা পথ ধরে চলে গেলাম শুঁটকি মার্কেটে। বিভিন্ন সাইজের এবং বিভিন্ন ধরে শুঁটকি নিলাম। সেখানে সাগরের মাছ দিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। এভাবে রাত ১২ টা নাগাদ আমরা ঘুরেফিরে অটোরিকশা নিয়ে চলে গেলাম সানসেট রিসোর্টে। কায়সার ভাই বললেন সবাইকে ঘুমিয়ে পড়তে, পরদিন সকালেই আমরা হিমছড়ি, ইনানি বিচ ও পাটোয়ার টেক বিচে যাবো। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম। রবিবার সকালে খুব ভোরে উঠে পড়লাম সবাই। নাস্তা সেরে একটা সিএনজি নিয়ে পথ চলতে শুরু করলাম টেকনাফের পাটোয়ার টেকের দিকে। কক্সবাজার শহরের ডলফিন মোড় থেকে পাটোয়ার টেক পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটারের রাস্তা।যাওয়ার পথে চোখে পড়লো রাস্তার দক্ষিণ পাশে সাগরের বিশাল জলরাশি। তার অপরদিকে উঁচু নিচু সব পাহাড় আর পাহাড়। হিমছড়ি, ইনানী বিচ পেরিয়ে অবশেষে আমরা গিয়ে পৌঁছালাম পাটোয়ার টেক বিচে। সেখানে আমরা কিছু গ্রুপ ছবি তুলে নিয়ে কিছুক্ষন সময় ঘুরাঘুরি করে নিলাম। রাস্তার উত্তর পাশে পাহাড়ের নিচে অনেক সুন্দর মনোমুগ্ধকর কোরাল স্টেশন নামে একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো কারুকার্য খচিত বাবুই পাখির বাসা। রেস্টুরেন্ট পুরোটাই বাঁশ, কাঠ এবং চাউনি দিয়ে তৈরি করা। আছে নান্দনিক ফুলের বাগান। পুরো রেস্টুরেন্ট জুড়ে হরেক রকমের শুধু ফুল আর ফুল। এরপর সেখান থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে ইনানী বিচে চলে গেলাম। সবার অংশগ্রহণে সেখানে শুরু হলো নতুন আরেক পর্ব হাডিভাঙ্গা খেলা।
পত্রিকার বার্তা সম্পাদক কায়সার ভাই একে একে চোখ বেঁধে দিয়ে হাতে একটা লাঠি ধরিয়ে দিলেন। সবাই গেলেন, কিন্তু কেউ ভাঙতে পারলেন না। যাক! অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর হাডি ভাঙলেন দৈনিক স্টার লাইন পত্রিকার দাগনভূঁঞা প্রতিনিধি জুলফিকার ভাই। সে এক নিদারুণ আনন্দ ছিলো। বিচে কিছু সময় অবস্থান করার পর আবাও গাড়িতে উঠে পড়লাম। এবার গন্তব্য হিমছড়ি বিচ ও পাহাড়। দুপুর তিনটা নাগান আমরা হিমছড়ি বিচের সামনে গিয়ে পৌঁছালাম। ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিলাম। এবার পাহাড়ের চূড়ায় উঠার পালা। কায়সার ভাই আমাদের দশজনের জন্য পাহাড়ের উপরে উঠতে কাউন্টার থেকে ত্রিশ টাকা ধরে টিকেট কিনে নিলেন। একে একে সবাই টিকেট দেখিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর একটু জিরিয়ে নিলাম। একটানা উপরে উঠা অনেক কষ্ট। তাই জিরিয়ে নিচ্ছি। এরপর আবার উঠা শুরু করলাম। উপর থেকে নিচে সাগরের উত্তাল জলতরঙ্গের ঢেউ আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করে তোলে। প্রকৃতি আসলেই অনেক সুন্দর তা এখানে না এলে কখনোই বুঝতাম না। সেখানে কিছু সময় কাটানো, ছবিও সেলফি তোলার পর অনেক সাবধানে নিচে নেমে এলাম। গাড়িতে উঠে ওই পথ ধরে আবারও ফিরে এলাম সুগন্ধা বিচে। সন্ধ্যার পরে কিছু সময় ঘুরাঘুরি করার পর রাতের খাবার সেরে নিলাম। এরপর আবারও বিচে গিয়ে রাত দুইটা পর্যন্ত ছিলাম। ধপাস ধপাস শব্দে সাগরের উত্তাল ঢেউ দেখা আমাদের মনকে চাঙ্গা করে দিলো। সেখান থেকে রাতে রিসোর্টে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে খুব তাড়াতাড়ি উঠে গেলাম। কারন এবার আপন নীড়ে ফেরার পালা। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে জামা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেলাম ডলফিন মোড়ের দিকে। সেখানে আগের দিন রাতে জসিম মাহমুদ ভাই আমাদের জন্য টিকেট সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। পরে সকাল সাড়ে ১১ টায় গাড়িতে উঠে সন্ধ্যায় ফিরে এলাম আপন নীড়ে। তবে এই ট্যুরে একটা ব্যাপার অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে আমাদের সকলের প্রিয় জসিম মাহমুদ ভাই কোথাও আমাদেরকে এক টাকাও খরচ করতে দিলেন না। আনন্দ ভ্রমণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবই তিনি নিজেই করলেন। পাশাপাশি কায়সার ভাইও নিজ খরচে আমাদেরকে অনেক কিছু খাওয়ালেন। আমি দৈনিক স্টার লাইন পরিবারের এবং এই ট্যুরের একজন সদস্য হতে পেরে নিজেকে অনেক গর্বিত মনে করছি, পাশাপাশি দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান স্টার লাইন গ্রুপের কর্তৃপক্ষের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাদের দৈনিক স্টার লাইন পরিবারের তিনদিনের এই আনন্দ ভ্রমণটা ছিলো সত্যি অনেক মনোমুগ্ধকর।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!