প্রফেসর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: পরিবেশ-প্রতিবেশ নিয়ে আজ সারাবিশ্ব উদ্বিগ্ন। দিনদিন পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। এর ফলে মাটি,পানি, বায়ু, বন, বন্যপ্রাণী, জলবায়ু বিভিন্নভাবে পরিবর্তন হতে দেখা যাচ্ছে। এতে মানুষ, প্রাণীকুল, উদ্ভিদরাজী, জৈববৈচিত্র দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চল’র প্রভাব চরম আকার ধারণ করতে যাচ্ছে। তাই পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সারাবিশ্ব বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। বাংলাদেশও পরিবেশের বিরুপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে।পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ইসলামে বিভিন্নভাবে আলোচনা করেছে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন ও রাসুলুল্লাহ সাঃ এর হাদিসে।মহান রাব্বুল আলামিন বলেছেন, ‘আমি জলধর মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত করি, যা দ্বারা উৎপন্ন করি শস্য, উদ্ভিদ ও পাতা ঘন উদ্যান।” সূরা নাবা ১৪--১৬ নং আয়াত।মাটি দূষণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। মাটিতে ভারী ধাতব পদার্থের পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে। ফলে মাটি থেকে উৎপাদিত ফসল, শাকসবজি আমাদের বিভিন্ন রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর দেয়া ভূমি আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার না করার কারণে ক্রমান্বয়ে দূষিত হয়ে পড়েছে।কোরআনুল করিমে এরশাদ হচ্ছে, " তাদের জন্য নিদর্শন একটি মাতৃভূমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য,তারা তা ভক্ষণ করে। আমি তাতে উৎপন্ন করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝর্ণাধারা,যাতে তারা ফল খায়। সূরা ইয়াসিন-৩৩ নং আয়াত। আমাদের প্রিয় নবী সাঃ সাবধান করে বলেছেন, " তোমরা তোমাদের আঙ্গিনাকে পরিচ্ছন্ন রাখো। "তিরমিজি --২৭৯৯* পরিবেশ সুস্থ, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে ইসলামের তাকিদ আছে। এরশাদ হচ্ছে, " তোমরা নিজেদের ধ্বংস নিজেরা ডেকে এনোনা।" সুরা বাকারা-১৯৫* অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, " মানুষের কৃতকর্মের দরুন সমুদ্র ও স্হলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। ”সূরা আর রুম -৪১ নং আয়াত। কোরআনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা সম্পর্কে অনেকবার বলা হয়েছে, এরশাদ হচ্ছে, ” আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও। "সূরা বাকারা ২২২ নং আয়াত। আল্লাহতালা পৃথিবীতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে, জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষায় বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন। এরশাদ হচ্ছে, " আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে এবং তাতে স্হাপন করেছি পর্বতমালা এবং উৎপন্ন করেছি নয়নাভিরাম বিবিধ উদ্ভিদরাজি।এটি আল্লাহর অনুরাগী বান্দাদের জন্য জ্ঞান ও উপদেশ স্বরুপ। ” --- সূরা কাফ ৭-৮ নং আয়াত।পাহাড়-পর্বতঃ আল্লাহ এরশাদ করেছেন," তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্হাপন করেছেন যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয়। -সূরা আননহল ১৫ নং আয়াত। কিন্তু আমরা পাহাড় কেটে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করে চলেছি।ইসলাম গাছ কেটে ফেলা কোনোভাবেই সমর্থন করে না। ইসলাম গাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে খুবই গুরুত্ব আরোপ করেছে। এমনকি যদি কোনো ব্যক্তি গাছ লাগান তাহলে তার জন্য তিনি সাদকায়ে জারিয়ার সওয়াব পাবেন।আমাদের প্রিয় নবী স. বলেছেন," যখন কোনো মুসলিম গাছ রোপণ করে অথবা বীজ বপন করে, আর মানুষ, পশুপাখি তা থেকে খায়,এটা বপন বা রোপণকারীর জন্য সদকা হিসেবে গন্য হবে।"-বুখারী ২৩২০।সর্বোপরি, যতদিন গাছ বেঁচে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত রোপণকারী সওয়াব পেতে থাকবেন। রোপণকারী যদি মৃত্যুবরন করেন,গাছ যদি কেয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকে, ওই ব্যক্তি কবরে কেয়ামত পর্যন্ত সওয়াব পাবেন। এই কারণে আমাদের প্রিয় নবী স. নিজে গাছ লাগাতেন এবং সাহাবিদের লাগানোর জন্য উৎসাহিত করতেন। অন্য এক হাদিসে নবী সাঃ বলেছেন," কেয়ামত কায়েম হয়ে গেলেও তোমাদের কারও হাতে যদি কোনো গাছের চারা থাকে এবং সে তা এর আগেই রোপণ করতে সক্ষম হয়, তবে যেন তা রোপন করে ফেলে। "-- সুনানে আহমদ ১২৯৮১।তাই আমরা সবাই নিজে গাছ লাগাবো এবং অন্যকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করবো।তাতে পরিবেশ সুরক্ষিত হবে।গাছেরও প্রাণ আছে। তাই ইচ্ছা হলেই কাটা যাবেনা।আমাদের প্রিয় নবী সাৎ গাছ কাটার বিষয়ে বলেছেন, যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে, আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন।”------- আবু দাউদ ৫২৪১। মহানবী সাঃ আরও বলেছেন," যদি তুমি মনে করো আগামীকাল কিয়ামত হবে,তবু আজ একটি গাছ লাগাও।" বায়ু দূষণঃ হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন," রাসুল স. যখন হাঁচি দিতেন, তখন তিনি মুখ ঢেকে নিতেন।"নবী করিম সাঃ বলেছেন," কোনো মুসলমান যদি একটি বৃক্ষের চারা রোপণ করে অথবা ক্ষেত- খামার করে, অতঃপর তা মানুষ, পাখি,কোনো জন্তু ভক্ষণ করে, তা তার জন্য সদকার সওয়াব হবে।" - মুসলিম ৫৫৩২।আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী স. বলেছেন,” যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে, কেয়ামত এসে গেছে,তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সে চারাটি লাগাবে।"- মুসলিম ৫৫৬০।আল্লাহতালা বলেন,” তিনি তোমাদের মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাতেই তোমাদের আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন।"-- সুরা হুদ ৬১ নং আয়াত।পানির অপর নাম জীবনঃ কোরআনে ৬০ জায়গায় পানি সম্পর্কে বলা হয়েছে। হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সঃ পানিতে প্র¯্রাব করতে নিষেধ করেছেন।"হযরত মোয়াজ বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত,রাসুল স. বলেছেন," তোমরা লানত পাওয়ার তিনটি কাজ, যথাঃ- পানির ঘাট,রাস্তার মাঝে এবং বৃক্ষের ছায়াতলে মলত্যাগ থেকে বিরত থাকো।"এইভাবে কোরআন হাদিসের অসংখ্য জায়গায় পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে বলা হয়েছে। আমাদের নবী সাঃ বলেছেন,"ঈমানের ৭৩ টি শাখা, তন্মধ্যে সর্বোত্তমটি হলো - লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আর সর্বনিম্নটি হলো, রাস্তা থেকে ক্ষতিকারক বস্তু দূরীভূত করা।"তিনি আরও বলেছেন," পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ। "সর্বশেষ, আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করুক, যাতে আমরা কোরআন- হাদিসের শিক্ষা নিয়ে পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসি।লেখকঃ শিক্ষাবিদ ও গবেষক এবং প্রতিষ্ঠাতা ও চীফ মেন্টর পরিবেশ ক্লাব বাংলাদেশ।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!