নুর উল্লাহ কায়সার: ফেনীতে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩৩ হাজার ৭৭৮ জন কৃষককে বিনামূল্যে সার, বীজ ও প্রদর্শনী দিচ্ছে সরকার। কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য জেলায় সার ও বীজ ক্রয় বাবদ ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে । এছাড়াও ৫ জেলা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জেলায় ৮৭৮টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন কাজও চলমান রয়েছে। সরকারী প্রণোদনা কৃষকের হাতে হাতে পৌঁছে যাওয়ায় ইতোমধ্যে ফসল উৎপাদনে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন ফেনীর কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, রবি ২০২১-২২ মৌসূমে ফেনীতে শীতকালীন তৈল জাতীয় ফসল উৎপাদনের জন্য প্রণোদনা দিতে ৭০ লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্ধ দেয় সরকার। এর আলোকে জেলায় নির্বাচিত ৭ হাজার ৯০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রণোদনার বীজ ও সার পেয়ে জেলায় ২ হাজার ৫০০ বিঘা সরিষা, ৪০০ বিঘা গম, ১ হাজার বিঘা করে ভূট্টা, সূর্যমূখী, মসুর, খেসারী চাষাবাদ শুরু হয়েছে। তবে ৫০০ বিঘা করে চিনাবাদাম ও মুগ চাষাবাদের জন্য প্রাপ্ত প্রণোদনা উপযুক্ত আবহাওয়া না থাকায় এখনো বিতরণ করা হয়নি।
ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিঠুন ভৌমিক জানান, তৈল জাতীয় ফসল বৃদ্ধির আওতায় প্রত্যেক গম চাষীকে ২০ কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার দেয়া হয়েছে। একই ভাবে ভূট্টা চাষের জন্য প্রতি কৃষককে ২ কেজি বীজ ও ৩০ কেজি সার, সরিষার জন্য ১ কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার, সূর্যমূখীর জন্য ১ কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার, চিনাবাদামের জন্য ১০ কেজি বীজ ও ১৫ কেজি সার, মুগের জন্য ৫ কেজি বীজ ও ১৫ কেজি সার, মসুরের জন্য ৫ কেজি বীজ ও ১৫ কেজি সার, খেসারীর জন্য ৮ কেজি বীজ ও ১৫ কেজি সার বিনামূল্যে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় জেলায় ৭ হাজার ৯০০ ব্যক্তিকে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।
এছাড়াও ২০২১-২২ অর্থ বছরে রবি মৌসুমে বোরো ধানের হাইব্রীড জাতের বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জেলায় ১৮ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য প্রাপ্ত সরকারী বরাদ্ধের ৮৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা হতে ৩৬ মেট্টিক টন বীজ ক্রয় বাবদ ৮২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও পরিবহন বাবদ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। হাইব্রীড বীজের জন্য নির্বাচিত কৃষকদের ২ কেজি করে বীজ বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। প্রণোদনার বীজ হাতে পেয়ে ইতোমধ্যে জেলায় প্রকল্পের আওতাভূক্ত ৫০ একর জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
একই মৌসূমে বোরো উৎপাদন বাড়াতে আরেকটি প্রকল্পে সরকার ২৩ লাখ টাকা টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার কৃষককে এ প্রণোদনা দিচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতি কৃষক ৫ কেজি বীজ ও ২০ কেজি করে দুই প্রকারের সার বিনামূল্যে পাচ্ছে। এদিকে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা আবু নঈম মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জানান, রবি মৌসূমে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ফেনীতে তৈল, মসলা ও সবজি জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে ৮৭৮টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন হচ্ছে। তন্মধ্যে ৬০টি বোরো ধান, ৩৫টি গম, ৪টি বার্লি, ৯৫টি ভূট্টা, ৮১টি সরিষা, ৩২টি চিনাবাদাম, ২০টি সয়াবিন, ১০২টি সূর্যমূখী, ৫০টি মসুর, ১৫টি খেসারী, ৮৫টি ফেলন, মুগ ২৬, পেয়াজ ২০, রোশন ১৫, মরিচ ৩০, তরমুজ ২৫, সর্জন ১০, সবজি ৪১, জৈব কৃষি ৫৮, আইল ফসল ৩৫, ভার্মি পোস্ট ২৬ ও ট্রাইকো কম্পোস্ট ১৩টি প্রদর্শনী রয়েছে। দেশের উৎপাদনে নতুন আবিস্কৃত জাত সম্পর্কে কৃষককে ধারণা দেয়া ও এসব জাত উৎপাদনে আগ্রহী করে তুলতেই এসব প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করছে সরকার। প্রদর্শনীতে কৃষকরে জমি ছাড়া বীজ, সার ও আনুসাঙ্গিক সকল ব্যয় প্রকল্প থেকে দেয়া হয়। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রদর্শনীর উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করে কার্যক্রম শুরু করেছেন।
ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম জানান, দেশে খাদ্য ঘাটটি নিরসন ও মজুদ নিশ্চিত করণের জন্য সরকার ফসল উৎপাদনে এবার ব্যাপক প্রণোদনা কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। প্রণোদনার সার ও বীজ বিতরণ এবং ৫ জেলা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনীসহ জেলায় অন্তত ৩৩ হাজার ৭৭৮জন কৃষককে সরকার প্রণোদনার আওতাভূক্ত করা হয়েছে। জেলায় বরাদ্ধের অনুকূলে প্রাপ্ত প্রণোদনা থেকে ১৮ হাজার কৃষককে হাইব্রীড জাতের বীজ, ৪ হাজার কৃষককে উফশী জাত চাষাবাদের জন্য বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। এছাড়া গম, ভূট্টা, সরিষা, সূর্যমূখী, চিনাবাদাম, মুগ, মসুর ও খেসারী চাষের জন্য ৭ হাজার ৯শ কৃষককে বিনামূল্যে সার ও বীজ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে মুগ এবং চিনাবাদাম চাষের প্রণোদনা ছাড়া বাকী প্রণোদনা কৃষকের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!