মোঃ কামরুল হাসান: করোনায় দীর্ঘ সময় ঝিমিয়ে থাকা কামার পল্লীর মানুষ এখন কর্মচঞ্চল’র মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। দম ফেলানোর ফুসরত নেই তাদের। টুং-টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো কামার পাড়ায়। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ফেনীতে কামারদের ব্যস্ত সময় কাটছে। জেলার কয়েক’শ কামার পরিবার এ সময়টার জন্যই অপেক্ষা করে। গ্রামগঞ্জ থেকে এক সময় বিনা পয়সায় কয়লা পাওয়া গেলেও এখন টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছেনা এসব কাঠ কয়লা। আবার কিনতে গেলে তাদের দিতে হয় দ্বিগুণ দাম। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলার ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, সোনাগাজী, দাগনভূঁঞা উপজেলা শহর ছাড়াও গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কামারদের কাজের কমতি নেই। এছাড়াও ফেনী শহরের তাকিয়া বাজার, রেলগেট এলাকা, কাসেমপুর, পাঁচগাছিয়া, সদর উপজেলার লস্করহাট সহ প্রায় প্রতিটি কামার শালায় কামাররা বিরতিহীনভাবে কাজ করছেন। ঈদ উপলক্ষে মুসলমানরা কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য চোরা, দা, বটিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী লোনা পানিতে সান দেয়া এবং নতুন কিছু কেনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সে লক্ষ্যে কামাররা ও কোরবান আসলে পুরো বছরের অর্থ পুষিয়ে নেন। কামারেরা জানায়, লোহার মানভেদে স্প্রিং লোহা ৫শ’ টাকা, নরমাল ৩শ’ টাকা, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১শ’৫০ থেকে ২শ’টাকা, দা ২শ’ ৫০ থেকে ৩শ’ টাকা, বটি সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫শ’ থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান কামাররা। ফেনী তাকিয়া বাজারের তপন কর্মকার নামে এক কামারশালার মালিক জানান, কামারদের কোন সংগঠন না থাকায় দাম পাচ্ছেন না তারা। কাজেরও নেই নির্দিষ্ট কোন রেট। ফলে কঠোর পরিশ্রম করেও ক্রেতাদের কাছ থেকে সন্তোষজনক মূল্য পাচ্ছেন না তারা। ফলে জেলার কয়েক শ’ কামার পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। সোনাগাজী কামারশালার কিরণ কর্মকার জানান, তিনি দীর্ঘ ৫৫ বছর কাজ করে তার জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তার পরিবারের সদস্যরাও উক্ত কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এবার কত আয় হবে বলে জিজ্ঞস করলে তিনি জানান, শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকলে অন্তত লাখ খানেক টাকা আয় হবে।ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউপির দারোগারহাট বাজারের দোলন কর্মকার বলেন, গ্রামগঞ্জ থেকে এক সময় বিনা পয়সায় কয়লা পাওয়া গেলেও এখন টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছেনা এসব কাঠ কয়লা। আবার কিনতে গেলে তাদের দিতে হয় দ্বিগুণ দাম। প্রতি বস্তা কয়লা সাড়ে ৩'শ থেকে ৪'শ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। ফলে এসব জিনিস কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এগুলো তৈরির পর বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। তার বাবা চিতাম কর্মকারও একই পেশায় ছিলেন। দোলন কর্মকার'র দুুুই ছেলের বড় ছেলেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। আর ছোট ছেলে উপজেলার একটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। আব্দুল্লাহ আল নোমান নামের এক ক্রেতা বলেন আধুুনিকতার ছোঁয়া ও কালের পরিক্রমায় বর্তমানে বিলুপ্তির পথে কামার শিল্প। এক সময় এই কামারের দোকানে অনেক ভিড় করতো ক্রেতারা। কামারদের কদরও ছিলো অনেক বেশি। তাদের তৈরি করা সরঞ্জাম অনেক বেশি মজবুত ও টেকসই। কিন্তু এখন মেশিনের সাহায্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হওয়ার কারণে আগের মতো ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়না। তাদের তৈরি করা যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষের আকর্ষণ হারিয়ে যাচ্ছে।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!