স্টার ডেস্ক: খাজা আহমদ একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ভাষা সৈনিক, আওয়ামী লীগ নেতা, ফেনী মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক ও সাংবাদিক সবকিছুকে ছাপিয়ে তিনি ফেনীর ‘রাজা’ বা ‘মুকুটহীন স¤্রাট নামে খ্যাত। বৃটিশ আমল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত ফেনীর সবকটি আন্দোলন সংগ্রাম তাঁর নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছে।খাজা আহমদ ১৯২০ সালের ২৬ মার্চ ফেনীর রামপুর সওদাগর বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম আসলাম মিয়া মোক্তার, মাতার নাম মরহুমা আয়েশা খাতুন। খাজা আহমদ উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন না। শুধুমাত্র ফেনী মডেল হাইস্কুল এবং পাইলট হাইস্কুলে কিছুদিন শিক্ষা লাভ করার পর তিনি কিশোর বয়সেই বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে একজন যুবনেতা হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। এরপর সবক’টি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন, ফেনীর প্রথম সারির নেতা এবং একজন নির্ভিক যোদ্ধা। ফেনীর বিভিন্ন সমস্যা ও দাবী আদায় সংগ্রামে তিনি ছিলেন সোচ্চার ব্যক্তি। এই সমস্ত আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করতে গিয়ে তিনি বহুবার নিগৃহীত হয়েছেন জীবনের দীর্ঘসময় খেটেছেন জেল জুলুম। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ১৯৩০ সালে খাজা আহমদ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক ঘোষিত ভারতের পৃথক স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেন। ঐ সময় আন্দোলনের মাঠে নেমে তিনি পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হন।১৯৩৪ সালে তিনি নোয়াখালী জেলা কৃষক সমিতির কার্যকরি কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৬ সালে খাদেমুল ইসলাম ব্যায়াম সমিতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পুরোপুরি সমাজ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৪০ সালে তিনি মুসলিম লীগে যোগদান করেন এবং ফেনী শহর মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪১ সালে শ্যামা-হক মন্ত্রী সভার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠিত করার অপরাধে প্রথমে তাকে স্ব-গ্রামে এবং পরে স্ব-বাড়ীতে অন্তরীন করে রাখা হয়।খাজা আহমদ ১৯৪২ সালে ভারত বর্ষ আইনে গ্রেফতার হন এবং দুই বছর পর ১৯৪৪ সালে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৪৬ মুসলিম লীগ মনোনীত বঙ্গীয় আইন সভার নির্বাচনে প্রচার প্রচারণায় হবীবুল্লাহ বাহারের পক্ষে জনসমর্থন আদায় এবং তাকে ফেনী আসন থেকে নির্বাচিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এ নির্বাচনে হবীবুল্লাহ বাহারের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শক্তিশালী বিরোধী দলীয় কংগ্রেস ও জামায়াতে ওলামা ও হিন্দু সমর্থক বঙ্গীয় আইন সভার প্রাক্তন সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় ফেনীতে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভার ভাষণে মুহম্মদ আলী জিন্নাহর উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা এ ঘোষনার পর রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হয় । সে সময়ে নোয়াখালী যুবলীগের সভাপতি খাজা আহমদ সাধারণ সম্পাদক বজলুল রহমানকে সাথে নিয়ে নোয়াখালরি প্রত্যন্ত অঞ্চলে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে দেন। ফেনীতে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একুশে পদক প্রাপ্ত ভাষা সৈনিক বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, খাজা আহমদের নেতৃত্বে আমরা ভাষা আন্দোলনে অংশ নেই। তিনি তখন ভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক। আমরা ফেনী শহরের বাইরের যত স্কুল ছিল একেকজন একএক স্কুলে গিয়ে ছাত্রদের সংগঠিত করি। খাজা আহমদ সহ আমরা কয়েকজন জীপ ভাড়া করে ফেনী থেকে চৌমুহনী চলে গেলাম। চৌমুহনী কলেজের ছাত্ররা আমাদের স্বাগত জানায়। চৌমুহনী কলেজের ছাত্ররা আমাদের বেশ ভালভাবে আপ্যায়িত করেছিল। খাজা আহমদ শুধূমাত্র স্বশরীরে মিটিং মিছিল বক্তৃতায় ভাষা আন্দোলনে অংশ নেননি। বুদ্ধিভিত্তিকভাবে এ অঞ্চলেরমানুষকে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য লেখনির ও আশ্রয় নেন। সেই লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালে ২৩ অক্টোবর ফেনীর সোম প্রেস থেকে সাপ্তাহিক ‘সংগ্রাম’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। যদিও তখনকার সময় একটি পত্রিকা প্রকাশ ব্যয়বহুল দু:সাহসিক ও ঝুকিপূর্ণ ছিল। আঞ্চলিক পত্রিকা হওয়া সত্ত্বেও ‘সংগ্রাম’ তখন শাসক দলের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে শাসকের ভিত নাড়াতে সক্ষম হন। এবিএম মূসা কর্তৃক সংগ্রাম পত্রিকায় ভাষা আন্দোলনকে সমর্থন করে একটি নিবন্ধ ছাপার কারণে সরকারী এক নির্দেশে পত্রিকাটির প্রকাশনা নিষিদ্ধ ও ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের প্রাক্কালে খাজা আহমদ গ্রেফতার হন।এবং পরেজেল থেকে বের হন। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ৫২র ভাষার আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬৬’র ৬ দফা, ৬৯’ উত্তাল গণঅভ্যূত্থান এবং ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে ফেনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন মরহুম খাজা আহমদ। সংগঠক হিসেবে স্বাধীনতাযুদ্ধে তার অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি ১৯৭০ সালে ফেনীতে আ’লীগের মনোনয়ন পেয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফেনীর ‘গভর্ণর’ নিয়োগ করেছিলেন খাজা আহমদকে। ১৯৭৬ সালে ২৯ মে ক্ষণজন্মা এ জননেতা মারা যান। গতকাল শনিবার খাজা আহম্মদ’র ৪৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী পারিবারিকভাবে পালিত হয়। এ উপলক্ষে শনিবার রামপুরে মরহুমের কবরে ফুল দিয়ে উনার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে কবর জিয়ারত করেন, ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল ও ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজীসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!