নিজস্ব প্রতিনিধি: ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার বাণিজ্যিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল দাদনার খাল। ২’শ বছরের পুরনো এ খাল দিয়ে নোয়াখালী খাল হয়ে ছোট ট্রলারে পণ্যসামগ্রী আনা নেয়া করতো ব্যবসায়ীরা। প্রবাহমান পানি এলাকার কৃষিকাজের সেচের মাধ্যম ছিল দাদনার খাল। এ খালটির পূর্ব অংশ ফেনী ছোট নদীর সাথে সংযুক্ত ছিল আর পশ্চিম অংশ মিলিত হয়েছে নোয়াখালী খালের সাথে। এখন ভরাট ও দখল হতে হতে এর প্রায় অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। বসুরহাট রোডের খালের প্রায় পুরোটা দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। এ খালের প্রবাহমান পানি আশেপাশের এলাকার কৃষি জমির সেচের কাজে ব্যবহার হতো। পরবর্তী সময় অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। সংস্কারের অভাবে দাগনভূঞা বাজারের ও দাগনভূঞা নামার বাজার আবাসিক এলাকার পতিত আবর্জনায় বন্ধ হয়ে আছে খালটির প্রবাহমান স্রোতধারা। এসব আবর্জনা পচে নষ্ট হয়ে গেছে পানি, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ ও রোগবালাই। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দাদনার খালটি প্রায় ২’শ বছরের পুরনো। সর্বশেষ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলার জন্য দাগনভূঞার পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্ন ট্রাস্ট ( পরিবেশ ও বনমন্ত্রণালয়ের) ৪ কোটি টাকা অর্থায়নে সংস্কার করে এবং বাজার থেকে পূর্ব অংশের একপাশ নান্দনিক ব্রিজ করা হয়। আর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন দাগনভূঞা পৌরসভা। এরপর আর কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। খালের অধিকাংশই দাগনভূঞা পৌরসভার বাজার ও আবাসিক এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। এ খালটি বর্তমানে দাগনভূঞা পৌরসভার অধীনে। পৌরসভার বাজারের পানি নিষ্কাসনের ও পৌরসভার আশপাশ আবাসিক এলাকার পয়নিষ্কাসনের একমাত্র মাধ্যম হল এ খাল।স্মৃতিচারণে কয়েকজন স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ জানান, কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের কৃষকরা এই খালের পানি দিয়ে সোনার ফসল ফলাতেন। নান্দনিক সৌন্দর্যের সে খালটি এখন অবহেলা-অনাদরে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, খালের অধিকাংশই দখল করে নির্মাণ করেছে স্থায়ী ভবন ও দোকানপাট। এতে খালের প্রশস্ততা ও গভীরতা কমে পরিণত হয়েছে সরু ড্রেনে। যতটুকু খাল আছে তার মধ্যে কচুরিপানা ও বনজঙ্গল দিয়ে ভরা। অপরদিকে পৌর এলাকাসহ দাগনভূঞা বাজার ও আবাসিক এলাকার ড্রেনেজ ও ডাস্টবিন ব্যবস্থা নেই। ওইসব স্থানের ময়লা আবর্জনা ফেলায় খালটি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে খালে পানির ¯্রােত বন্ধ হয়ে যায়। বাজারে দৈনিক ১০/১২ টি গরু জবাই করে সেগুলোর ময়লা খালে ফেলা হয় ও আবর্জনা পঁচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, সৃষ্টি হচ্ছে ডেঙ্গোসহ মশার উপদ্রোপ। এতে একদিকে বাড়ছে রোগবালাই, হুমকিতে রয়েছে পরিবেশ। সংস্কার আর খননের অভাবে বর্ষাকালেও আগের মতো পানি যায়না এক সময়ের খরস্রোতা এ খালে। এতে করে বর্ষাকালে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তাই খালটি পুণরুদ্ধার ও সংস্কার করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের এবং দাগনভূঞা পৌরসভার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন স্থানীয়রা।দাগনভূঞা পৌরসভার মেয়র ওমর ফারুক খান জানান, দাদনার খালটি জেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে। অবৈধ দখল উচ্ছেদের বিষয়ে তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে । এটির গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেন্ডার হয়েছে এখনও তারা কাজ শুরু করতে পারেনি। তাছাড়া খালের যে পরিস্থিতি, একা সংস্কার করা সম্ভব নয়। আমরা প্রতি বছর খালটি পরিষ্কার করে থাকি। তবে মানুষকে সচেতন হতে হবে তারা যেন খালে ময়লা না পেলে। আর খালটি পরিপূর্ণ সংস্কার ও দখলমুক্ত করার জন্য উপজেলা প্রশাসন, খাল সংস্কারকারি সংস্থা বিআরডি ও ওয়াবদ বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টায় খালটি পুনঃজীবিত করা সম্ভব। তাই সকলের সহযোগীতার দাবি জানিয়েছেন তিনি।এ ব্যাপারে দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া বলেন, বিষয়টি শুনেছি, নান্দনিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী দাদনার খাল। স্থানীয়রা অনেক কষ্টে রয়েছেন। দাগনভূঞা উপজেলাতে বিএডিসি এর মাধ্যমে খালগুলো সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজাপুরে একটি খাল সংস্কার করে বর্তমানে পূর্বচন্দ্রপুরে খাল সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে দাদনার খালটিও পুনরুদ্ধার করে সংস্কার করা হবে। এরই অংশ হিসেবে উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে খালটি নকশা অনুযায়ী চিহ্নিত করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।খালের কোন অংশ অবৈধ থাকলে তা উদ্ধার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!