নুর উল্লাহ কায়সার: ফেনী ও আশপাশের এলাকা থেকে সংগৃহিত হাজার হাজার পশুর চামড়া ফেনীর পাঁচগাছিয়া বাজারে স্তুপ হলেও বেশ কয়েক বছর যাবত নানা অনিশ্চয়তায় চামড়া ব্যবসায় এ বাজারটি জৌলুস হারিয়েছে। ক্রমাগত মূল্য হ্রাস, ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, ট্যানারী মালিকদের থেকে বকেয়া আদায় করতে না পারা সহ নানা কারনেই ফেনীতে চামড়া ব্যবসায়ীদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এক সময়ে ফেনীর ঐতিহ্যবাহী চামড়ার বাজার পাঁচগাছিয়া বাজারে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের একটি অংশ থেকে হাজার হাজার কোরবানী পশুর চামড়া জোড় করা হলেও এখন আর জমজমাট সেই চামড়ার বাজার নেই। বিগত এক দশক আগেও এ বাজারে শতাধিক চামড়া আড়ৎদার থাকলেও বর্তমানে মাত্র ১২-১৪ জন আড়ৎদার এ ব্যবসা ধরে রেখেছেন। নেই আগেরমত তেমন কোন হাঁকডাক।
জানা যায়, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন ফেনীর পাঁচগাছিয়া বাজারের কোরবানীর পশুর চামড়ার ব্যবসা বড় হতে থাকে। বছর জুড়ে অন্তত ৫০-৭০ জন আড়ৎদার এ বাজারে মোকামে বসতেন। বিশেষ করে কোরবানীর পশুর চামড়া সংগ্রহ করতে এ বাজারের হাঁকডাক ছিলো চোখে পড়ার মত। ব্যবসায়ীরা অগ্রিম টাকা দিয়ে মৌসূমী চামড়া ক্রেতাদের সাথে চুক্তি করে রাখতেন। তারা গ্রামের অলিতে গলিতে থাকা কোরবানীর পশুর চামড়া সংগ্রহ করে তা আড়ৎদারের নিকট পৌছে দিতেন। কোন ব্যবসায়ী সর্বাধিক চামড়া সংগ্রহ করতে পারে সেটিই ছিলো তাদের প্রতিযোগিতার মূলচাবিকাঠি। রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন খ্যাতিমান ট্যানারী ব্যবসায়ীরা ফেনীর পাঁচগাছিয়া বাজারে গিয়ে চামড়া ক্রয় করে রাজধানীতে নিয়ে যেতেন। প্রতি কোরবানী মৌসূমে এ চামড়া বাজারে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হতো।
ব্যবসায়ীরা জানান, বিগত কয়েক বছর যাবত চামড়া ব্যবসায়ীরা টানা লোকসানে পড়ে অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। আবার কেউ কেউ টিকে থাকলেও রাজধানীর ট্যানারী মালিকদের বাকিতে চামড়া দিয়ে বছরের পর বছর পার হলেও পাওনা টাকা আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে হতাশায় ভোগছেন। তাছাড়া বিগত কয়েক বছর যাবত ক্রমাগত চামড়ার মূল্য হ্রাস মৌসূমী চামড়া ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাজ স্পস্ট করে দিয়েছে। ক্রেতাদের প্রতিযোগিতা না থাকায় চামড়া বিক্রেতারাও সঠিক দাম নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। অনেকেই চামড়ার মূল্য না পেয়ে মাটিতে কোরবানীর পশুর চামড়া পুঁতে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ আশপাশের এতিমখানা অথবা গোরাবা ফান্ডের জন্য চামড়াগুলো দান করে দিয়েছে।ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও গ্রামের আমান উদ্দিন জানান, ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়া রবিবার দুপুরের দিকে এসে এক খুচরা ক্রেতা ৩৫০ টাকা দাম বলে যায়। কোরবানীর পশুর চামড়ায় গরিবের হক আছে বলে আরেকটু বেশি দামের আশায় অপেক্ষা করি। কিন্তুু আর কেউ এটি ক্রয় করতে না আসায় বিকালে ৩০০ টাকায় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হই।
জামেয়া এমদাদিয়া দক্ষিণ মধুয়াই মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ রফিকুল ইসলাম জানান, কোরবানী ঈদের দিন মাদ্রাসার ছাত্ররা আশপাশের এলাকা থেকে ১৬৫টি গরু ও ২৬টি ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেছে। গরুর চামড়া গুলো ৩৩০ টাকা দামে পাঁচগাছিয়া বাজারে পৌছে দিয়েছি। ছাগলের চামড়া কেউ নেয়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে লালপোল সুলতানীয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি আবুল কাসেম জানান, তার মাদ্রাসার জন্য ৩৬৫টি গরুর ও ৪০টির মতো ছাগলের চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। গরুর চামড়া গুলো ৩৭০ টাকা হারে বিক্রি হলেও ছাগলের চামড়া গুলো এখনো পড়ে আছে। পড়ে থাকা ছাগলের চামড়াগুলো বিনামূল্যে নিয়ে যেতে বললেও কেউ নিতে চাচ্ছেনা।
ফেনীর পাঁচগাছিয়া বাজারে পশুর চামড়ার আড়তে গিয়ে দেখা যায় কয়েকটি আড়তে চামড়ার স্তুপ করা হয়েছে। এসব আড়তে শ্রমিকরা চামড়ায় লবন লাগানোসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। এখনো উপজেলা শহরগুলো থেকে বিভিন্ন পরিবহনে করে নিয়ে আসা চামড়া নামানো হচ্ছে। আড়ৎদারদের মাঝে প্রতিযোগিতা না থাকায় দাম কম পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন খুচরা ও মৌসূমী চামড়া ব্যবসায়ীরা। পাঁচগাছিয়া বাজারের চামড়া আড়ৎদার আরিফ এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী নিজাম উদ্দিন ভূঞা জানান, সরকার কোরবানীর পশুর মাঝে গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও ট্যানারী মালিকদের থেকে চামড়ার দাম পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাই আড়ৎদাররা চামড়া ক্রয়ে তেমন উৎসাহী নয়। তার আড়তে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে প্রায় ১৫ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। আড়ৎদার নুর নবী জানান, বিগত ৫ বছর আগেও টাকাও ট্যানারী মালিকদের থেকে এখনো আদায় করতে পারিনি। তারপরও কোরবানীর মৌসূমে প্রকারবেধে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করেছি।
পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবল হক লিটন বলেন, জেলার সর্ববৃহৎ পশুর চামড়ার আড়ৎ ফেনীর পাঁচগাছিয়া বাজারে অবস্থিত। এক সময়ে এ বাজারে অন্যান্য জেলা থেকেও চামড়া আসতো। শতাধিক আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীর মনোনীত ব্যক্তিরা গ্রামেগঞ্জে চামড়া ক্রয় ও সংগ্রহ নিয়ে কাড়াকাড়ি করতো। এখন আর সেই জৌলুস নাই। সঠিক সময়ে চামড়ার দাম নির্ধারণ না করা, ন্যায্য দর না পাওয়া, বিক্রিত মূল্য পরিশোধে গড়িমসি ও টানা লোকসানের কারণে এখন নতুন ভাবে কেউ এ ব্যবসায় আসতে চাচ্ছেনা। পুরানদের মাঝেও রয়েছে অনাগ্রহ।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!