প্রফেসর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: পৃথিবী শুধু ভোগের নয়, একে যত্নও করতে হবে। ভোগবাদী মানুষেরা শুধু ভোগ করতেই ভালবাসে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য যে সংরক্ষণ করতে হবে তা বেমালুম ভুলে যায়। মনে করে, আমার অতিরিক্ত ভোগ, অতিরিক্ত লোভ এতে আর কতটুকুই ক্ষতি হবে। কিন্তু সবাই যদি এভাবে ভোগ আর লোভের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে,তাহলে এই ভোগ আর লোভ একদিন আমাদের সকলকেই বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলবে।কেউ মনে করে বনের কিছু অংশ দখল করলে, কিছু গাছ কাটলে পরিবেশের কিইবা ক্ষতি হবে। আমাদের ৩ লাখ ৩৮ হাজার একর বনভূমির মধ্যে ১লাখ ৩৮ হাজার একর বনভূমি দখল হয়ে যায়। নদনদী দখল করে বিভিন্ন স্হাপনা তৈরি করে, ভরাট করে রাস্তা তৈরি করে,আবর্জনা ফেলে নদনদীর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটাচ্ছি আমরা। কলকারখানার বর্জ্য, রাসায়নিক বর্জ্য,কীট নাশক প্রয়োগ করে মাটিকে করছি আমরা দূষিত। মাটিতে ভারী পদার্থের পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে। যা খাদ্যচক্রের মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করছে,পরিনামে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধছে।। বজ্রপাত আজ মহামারীতে রুপ নিয়েছে। নদী ও সাগরের পানি দূষিত হয়ে মাছ ও জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংসের মুখে নিপতিত করছে।এভাবে আমরা নগরায়ণের ফলে ক্ষতি করছি স্বাভাবিক পরিবেশ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি হওয়ার ফলে দিনদিন জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। বায়ুদূষণের দিক দিয়ে মাঝেমাঝে ঢাকা এক নম্বর অবস্থানে চলে যায়।ঢাকাসহ বড়বড় শহরে বায়ুদূষণের ফলে শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগেে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।পানিদূষণের ফলে পানিবাহিত রোগ বালাইয়ের উপদ্রব দেখা দিয়েছে।বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানি পাওয়া কষ্টকর।জলোচ্ছ্বাসের ফলে লবণাক্ত পানি দু' কুল ছাপিয়ে সয়লাব হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে সুপেয় পানির আধার নষ্ট হয়ে যায়, জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।এরজন্য প্রয়োজন উপকূলে টেকসই বাঁধ নির্মাণ। শব্দদূষণ আজ এক মহামারীর রুপ ধারণ করেছে।প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে উচ্চ স্বরে হর্ণ বাজানো নিত্তনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।অহেতুক হর্ণ না বাজানোর জন্য আমাদের সকলে গাড়ি চালকদেরকে ব্যক্তি পর্যায় থেকে সচেতনতার কাজ শুরু করতে হবে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল এলাকাকে নিরব এলাকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।না হয় শিশুসহ আমরা সকলে বধিরতার দিকে এগিয়ে যাবো।চাষাবাদে রাসায়নিক সার না ব্যবহার করার উদ্যোগ নিতে হবে।সকল ধরনের দূষণকে সকলে মিলে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে আমরা রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাবো।পলিথিন ও প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকি।স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সহায়ক পাটের ব্যাগ ব্যবহার করি।কলকারখানার ধোঁয়া, গাড়ীর ধোঁয়া, লঞ্চ ও ট্রলারের ধোঁয়া থেকে জাতিকে বাঁচানোর জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ধোঁয়া নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে।মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কমাতে হবে।কার্বন ডাই অক্সাইড যাতে গাছ শোষণ করে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন ত্যাগ করতে পারে এজন্য বেশিবেশি গাছ লাগাতে হবে।প্রয়োজন ছাড়া গাছ কর্তন বন্ধ করতে হবে।মহামারী করোনা অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে। বৃক্ষ রোপণ না বাড়ালে একদিন হয়তো পানির বোতলের মতো অক্সিজেনের বোতল কিনতে হতে পারে।পরিবেশকে তার জায়গায় থাকতে দিতে হবে।প্রকৃতি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য তাদের ক্ষতি না করে স্বাভাবিক থাকতে দিতে হবে।এজন্যই এবারের বিশ্বপরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ঃ " প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার, হোক সবার অঙ্গীকার "। এই প্রতিপাদ্য বিষয় আগামী ১০ বছরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই আমরা সকলেই প্রকৃতিকে উদ্ধার করে প্রকৃতির মাঝেই ফিরে দিতে হবে।পরিবেশ পুনরুদ্ধারের কাজে তরুণরাই এগিয়ে আসতে হবে।তাইতো এবারের শ্লোগানঃ " প্রকৃতি সংরক্ষণ করি,প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করি "। নতুন প্রজন্মকেই পরিবেশ,প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে।এজন্য শিক্ষার্থীদের পরিবেশ, বন,বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং বাংলাদেশকে সবুজায়ন,নির্মল ও দূষণমুক্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে" পরিবেশ ক্লাব বাংলাদেশ " নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও পরিবেশেের প্রতি উদাসীন থেকে আর কোনো উন্নয়ন নয়।প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাত্রাই বিনির্মাণ করতে পারে একটি সুখী সমৃদ্ধ সমাজ।পরিবেশ, প্রকৃতি পুনরুদ্ধারের কাজ আমাদের সবাইর,কারো একার নয়,সরকারেরও একার নয়।প্রকৃতি - পরিবেশের ক্ষতি যখন শুরু হবে তখন কেউই রক্ষা পাবে না।পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমার আপনার সকলের।তাই আসুন, " মুজিব বর্ষে অঙ্গিকার করি,সোনার বাংলা সবুজ করি"। লেখকঃ শিক্ষাবিদ ও গবেষক এবং প্রতিষ্ঠাতা ও চীফ মেন্টর পরিবেশ ক্লাব বাংলাদেশ
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!