বি. বাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার খড়মপুর গ্রাম। এই গ্রামের পাশ দিয়ে যায় কালিদাস পাহালিকা নামক খরস্রোতা নদী। নদীর দু ’পাড়ে এখানকার জেলেদের বাস। এই নদী থেকে জেলেরা মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। একদিন জেলেদের জালে আটকা পড়ে দেহবিহীন মানুষের একটি মাথা। এই নিয়ে জেলেদের মাঝে গুঞ্জন শুরু হয়। জাল থেকে মাথাটি ফেলে দিতে উদ্যত হয় তারা। ভয় ও আজানিত আতংক নিয়েই জালে আটকে পড়া দেহবিহীন মাথার দিকে এগিয়ে যায় তারা। তখনই দেহবিহীন মস্তকটি কথা বলে ওঠে।
এদিক-সেদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে পায়না জেলেরা। অশরিরী মস্তকের সাবলীল কন্ঠস্বর জেলেদের আরো আতংকিত ও বিচলিত করে তোলে। এমনিতর অবস্থায় মস্তকটি আবারও বলে ওঠেঃ আমি মুসলমান, তোরা হিন্দু। আমায় ধরতে হলে তোদের পবিত্র হতে হবে। হিন্দু জেলেরা বলেনঃ আমরা কিভাবে পবিত্র হবো ?মস্তকঃ তোদের মুসলমান হতে হবে।জেলেরা বলেনঃ কিভাবে মুসলমান হবো ?মস্তকঃ কলেমা পড়ে।জেলেঃ আমরাতো কলেমা পড়তে জানিনা। মস্তকঃ আমি তোদের কলেমা পড়াচ্ছি। আমার সাথে সাথে বলো, লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)।
এভাবে জেলেরা কলেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলেন। এরপর দেহবিহীন মস্তকটি হিন্দু অধ্যুষিত খড়মপুরে সমাহিত করতে জেলেদের নির্দেশ দেন। সে সময় মস্তকটি তার নাম বলেন, শাহ পীর সৈয়দ আহমেদ গেছো দারজ (রঃ)। দেহ বিহীন মস্তকের অলৌকিক ক্ষমতার খবর মূহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে অত্রাঞ্চলে। সে থেকে স্থানীয় ভাষায় মাজারটির নাম হয়ে যায় ‘কেল্যা শাহ’ এর মাজার। মাজারটির প্রতিকী আদল গোলাকৃতির। কথাগুলো একনাগাড়ে বললেন, খড়মপুর কেল্যা শাহ মাজারের খাদেম মোঃ মোবাশ্বের আহমেদ। তিনি আরও বলেন, কেল্যাশাহ কোথা থেকে আসছেন, কেন আসছেন এসব কেউ জানেনা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, আজ থেকে প্রায় তেরশ বছর আগের ঘটনা এটি। এমন ধারণার কারন কি জিজ্ঞেস করলে খাদেম বলেন, এখানকার ওই যে মসজিদটা দেখছেন, সেটার গায়ে সন,তারিখ লেখা আছে, তবে তা অস্পষ্ট। মসজিটির দেওয়ালগুলো পঁচিশ ফিট চওড়া। সন-তারিখ অনুযায়ী অনেকেই এই ঘটনাটিকে তেরশ বছর আগের বলে দাবী করেন। বিশাল আয়তন জুড়ে কেল্যাশাহ মাজার ও মসজিদ অবস্থিত ।
ত্রিপুরার রাজা মানিক বন্দোপাধ্যায় মাজার ও মসজিদের জন্য ৫২ ধোন সম্পত্তি ওয়াকফ করে দেন। ১ ধোন সমান ৩০ ডিসিম। গাণিতিক হারে ওয়াকফকৃত সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪,৯৬০ ডিসিম। এছাড়াও বিভিন্ন সময় অনেকে মাজার ও মসজিদের নামে আরও সম্পত্তি দান করেন। বর্তমানে কেল্যাশাহ মাজার- মসজিদের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ত্রিশ হাজার ডিসিম।প্রতিবছর এখানে দু’বার ওরস হয়। তখন মাজার এলাকাসহ আশপাশের এলাকা মানুষের পদভারে মুখরিত থাকে। সারাদেশ থেকে মানুষ আসে। শতশত অস্থায়ী দোকান বসে। দু,ওরস মিলে এখান থেকে আয় হয় প্রায় দু’কোটি টাকা। কেল্যা শাহ মাজারের মূল ফটকের একাধিক স্থানে লেখা রয়েছে, এখানে সেজদা করবেননা। কে শুনে কার কথা মাজার পূজারীরা দেদারছে সেজদা করে যাচ্ছে। এছাড়াও নদীর পাড়ের জেলে পল্লীতে হিন্দুরা আলাদাভাবে ‘ত্রিবেণী’ নামে কেল্যাশাহের স্মরণে আরেকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। ত্রিবেণী অনুষ্ঠান থেকে বছরে প্রচুর আয় হয়।
মাজারে আসা ভক্ত অনুরক্তদের দানের অর্থ মাজার ও মসজিদের উন্নয়ন বাবদ খরচ করা হয়। আয়ের একটি অংশ ওয়াকফ প্রশাসনের মাধ্যমে রাজস্ব খাতে জমা হয়। ওয়াকফ মূলে মাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট মোট পঁচিশটি গোত্র রয়েছে। এই গোত্রগুলো থেকে দু’বছর অন্তর মাজার পরিচালনা কমিটি করা হয়। জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে মাজারের সভাপতি। ওয়াকফ কর্মকর্তাও একজন কমিটিতে থাকেন। কমিটি থাকার পরও ওয়াকফ মূলে পঁচিশ গোত্রের লোকেরা পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন মাজার দেখভাল করে থাকেন। দেখভালের দায়িত্ব যার যেদিন পড়ে, সেদিনের আয় তিনি পেয়ে থাকেন । তবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সে দিন মাজারে থাকা লোকদের দু’বেলা খাওয়াতে হয়। খাদেম মোবাশ্বের আহমেদ বলেন, এখন ডাল সিজন। মানুষজন কম আসে। তারপরও প্রতিদিন ত্রিশ হাজার থেকে ষাট হাজার টাকায় মাজারের আয় হয়। কেল্যাশাহ মাজারে কতজন খাদেম আছেন, জানতে চাইলে মোবাশ্বের আহমেদ তার সঠিক পরিসংখ্যা দিতে পারেনি বা দেননি। তবে মাজার এলাকার মানুষের দাবী এখানে খাদেম রয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ।
লেখক: বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম’রকেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সহযোগী সম্পাদক দৈনিক স্টার লাইন।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!