প্রফেসর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: আজ ২৮ জুলাই বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই দিবসের গুরুত্ব অনেক। দিবস পালন করা হয় সচেতনতার জন্য। যাতে ঐ দিবসের আলোচনা পর্যালোচনার মাধ্যমে বছরের বাকী দিনগুলোতে তা গুরুত্বের সাথে পরিপালন করা যায়। প্রকৃতি মহান সৃষ্টিকর্তার দান,একে স্বাভাবিক রাখা ও সংরক্ষণ করা আমাদেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রকৃতি ভালোতো আমরা ভালো। আর প্রকৃতিকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের।বাংলাদেশের সংবিধানে ১৮(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে," রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবে। " সংবিধানকে সমুন্নত রাখা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব। আমাদের চারপাশে যা আছে তাই পরিবেশ ও প্রকৃতি। পরিবেশ রক্ষা করলে প্রকৃতি বাঁচবে,প্রকৃতি বাঁচলে মানুষ বাঁচবে।আজ পরিবেশ মানুষের দ্বারা দূষিত হচ্ছে। বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, কলকারখানার দূষণ, মাটি দূষণ, পানি দূষণ, বর্জ্য দূষণ এইভাবে সর্বপ্রকার দূষণের মূলে আমরা মানুষরাই দায়ী। দূষণের মাত্রা দিনদিন বাড়ছে যা আমাদের কর্মের ফল। সকল ধরনের দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার পদক্ষেপ আমাদেরকে নিতে হবে। জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার আমাদের খাদ্যচক্রকে দূষিত করে ফেলছে যার কারণে মানুষের শরীরে নানা প্রকার রোগ বাসা বাঁধছে। বায়ু দূষণের ফলে শ্বাস কষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। বাতাসে শীসার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশুরা নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। শব্দ দূষণের ফলে মানুষের বধিরতার হার বাড়ছে।শিশু ও রুগীর ঘুমের সমস্যাসহ নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।গাড়ী ও কলকারখানার ধোঁয়া পরিবেশকে দূষিত করে তুলেছে। প্রকৃতির অন্যতম উপাদান গাছ। তা আমরা প্রয়োজনে - অপ্রয়োজনে কর্তন করছি।জনসংখ্যা বৃদ্ধি, আবাসন,কলকারখানা নির্মাণের নামে নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে যেখানে ২৫ ভাগ বন থাকার কথা সেখানে আছে ১৭ ভাগ।ফলে অক্সিজেনের সংকট হচ্ছে। বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। বন্যপ্রাণীকে তাদের আবাসস্থলে থাকতে না দিলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। বন যেমন অক্সিজেন সরবরাহ করে তেমনি দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নেয়। আবার বন্যপ্রাণীকে বুকে জড়িয়ে রাখে। যা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করে।গ্রীনহাউজ গ্যাস যেমন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন,নাইট্রাস অক্সাইড বায়ুমন্ডলে অবস্থান করে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে।যার ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে।বরফ গলে সমুদ্রের পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। সাগরের পানি বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করছে।উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। বন্যা,জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, দাবানল,খরা,ধুলিঝড়, ভূমিধ্বস ও ভূমিকম্প ইত্যাদি জলবায়ু পরিবর্তনেরই ফল।জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে বিভিন্ন দেশে জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, দাবানল,ভূমিধস,ধুলিঝড়ের আবির্ভাব ঘটছে।কানাডায় ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে। যারফলে দাবানলে পুড়ে গেছে অনেক জায়গা। গতবছর পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন পুড়েছে বারবার।চীন,জাপান,ভারতে দেখা দিয়েছে বন্যা।চীনে ৩০০ ফুট উপরে উঠেছে ধুলিঝড়।সবকিছুই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হচ্ছে। ২০০৭ সালে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেলে বলা হয়েছিল,২০৫০ সালের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা এক মিটার পর্যন্ত বাড়বে।এর ফলে মালদ্বীপ নামক দেশটা পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাবে।এমনকি বাংলাদেশের উপকূলের ১৭ শতাংশ ভূমি চলে যাবে সমুদ্রগর্ভে।জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে বাড়ছে লবণাক্ততা।সংকট দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির। প্রকৃতিকে নিজের জায়গায় থাকতে দিই।প্রকৃতিকে ধ্বংস করলে সে আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিবেই।পরিশেষে, প্রকৃতিকে ভালবেসে তাকে সংরক্ষণ করতে হবে।তাহলে আমরা প্রকৃতিতে শান্তিতে বসবাস করতে পারবো। প্রকৃতি ও মানুষ অবিচ্ছেদ্য। প্রকৃতির অসুস্থতা মানুষের অসুস্থতার শামিল।প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও শিক্ষা। আমাদের অনেকেরই পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা নেই। সচেতনতার অভাব সর্বত্র। " পরিবেশ ক্লাব বাংলাদেশ " শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিবেশ শিক্ষা ও সচেতনতার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সকল শিক্ষার্থীকে এই ক্লাবের সদস্য হয়ে পরিবেশ শিক্ষা ও সচেতনতার কাজকে বেগবান করার আহবান জানাচ্ছি। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে সহযোগিতা প্রদান করার আহবান জানাচ্ছি। আজকের তরুণরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সুতরাং তাদের মাঝে প্রকৃতি ও পরিবেশ শিক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টি করা অতিব জরুরি। পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণে সকলে এগিয়ে আসি।লেখকঃ শিক্ষাবিদ ও গবেষক এবং প্রতিষ্ঠাতা ও চীফ মেন্টর পরিবেশ ক্লাব বাংলাদেশ।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!