মোঃ কামরুল হাসান: পাহাড়ি জনপদে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লেবু চাষ। লেবু চাষে সংসার চলে শশী কুমার ত্রিপুরাসহ পাহাড়ি বাঙালি হাজারো চাষির। লেবুই চাষের মাধ্যমেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে।স্থানীয়রা জানান, এখান থেকে প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকার লেবু দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উঁচু নিচু পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আঁকাবাঁকা পথ ধরে বয়ে চলা প্রত্যন্ত অঞ্চল ফটিকছড়ি উপজেলা বাগানবাজার ইউপির নয় দোলং গ্রাম। সেখানে ষাটোর্ধ লেবু চাষী শশী কুমার ত্রিপুরা ১শ ৪০ শতক পাহাড়ি জায়গার উপর সাড়ে ৮ শতাধিক কাগজি লেবুর চারা লাগান। এগুলো ক্রয় করতে খরচ হয় ১২ হাজার টাকা। কিন্তু পরিচর্যা থেকে শুরু সবকিছু মিলিয়ে লেবু চাষে তার ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি ও তাঁর ছেলে ইমরান কুমার ত্রিপুরা ও স্ত্রী সহ লেবু বাগানের গাছগুলো পরিচর্যা করেন। এই লেবুর চারা রোপণের উপযুক্ত সময় মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। লেবুর মধ্যে যাতে কোন ক্ষতিকর পোকার উপদ্রুব না হয় সেজন্য সালফার ও বরম ওষুধ ব্যবহার করেন। প্রথমে চারা লাগানোর ৩ বছর পর্যন্ত কোন লেবু ধরে না। একবার চারা লাগালে ১০-১২ বছর পর্যন্ত চলে যায়। প্রতিটি লেবু গাছে ৭০-৮০ টি লেবু ধরে। স্থানীয়রা জানান, সারা বছরই এখানে লেবুর চাষ হচ্ছে। স্বাদ ও ঘ্রাণে অতুলনীয় এ লেবুতে রয়েছে ঠাসা রস। তবে বর্ষায় লেবুর ফলন তুলনামূলক অনেক বেশি হয়। রমজান এবং করোনার কারণেও লেবুর চাহিদা অনেক বেশি। শুষ্ক মৌসুমে সেচের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করলেও লেবুর ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাই পাহাড়ি এলাকার লোকজন পতিত জমি খালি না ফেলে রেখে এখন লেবু চাষে মনোযোগ দিয়েছেন। কলম চারা করে, রোপণের বছর যেতেই গাছে ধরা পড়ে লেবু। তারা আরো বলেন, প্রতি বস্তা লেবু ২৫’শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা করে প্রতিদিন এখান থেকে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকার লেবু স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যায় পাইকারি বিক্রেতারা।লেবু চাষী শশী কুমার ত্রিপুরা বলেন, তিনি ৩০ বছর ধরে এই লেবুর চাষ করেন। তার বাগানে প্রায় ৮ শতাধিক লেবু গাছ রয়েছে। এগুলো বিক্রি করে তিনি বছরে দেড় থেকে দুই লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন। এগুলোর চাহিদা বেশি থাকে বিশেষ করে রমজানে। লেবু সারা বছরই গাছ থেকে তুলে স্থানীয় নয় দোলং বাজারে ব্যাপারীদের কাছে লেবুর শ’ (১০০টি) প্রতি বিক্রি করেন ৬শ থেকে ৭শ টাকা দরে। বস্তা প্রতি ২৫’শ থেকে ৩ হাজার টাকা। চটের বস্তা ভরে আড়তদাররা গাড়ি করে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করেও খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, করেরহাট, ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষিপুর, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, ঢাকার কারওয়ান বাজার সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করেন।তিনি আরো বলেন, তার দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রয়েছে। এরমধ্যে তিন মেয়েকে লেবু বিক্রি করে বিয়ে দিয়েছে। বড় ছেলে ইমরান কুমার ত্রিপুরা তার সঙ্গে লেবু বাগানে কাজ করেন। ছোট ছেলে ও দুই মেয়ে স্থানীয় নয় দোলং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাই স্কুলে পড়াশুনা করেন। লেবু চাষ করে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে অনেক সুখেই দিন কাটছে তার। স্থানীয় নয় দোলং উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ শাহজাহান বলেন, আমাদের বাগানবাজার ইউপির নয় দোলং, রহমতপুর ও কচুয়া খোন্দা রহমত পুরের ৩০ কিলোমিটার বিস্তির্ণ এলাকাজুড়ে পাহাড়ি বাঙ্গালী মানুষের জীবনযাপনের একমাত্র ভরসা এই লেবু চাষ। লেবু চাষ করেই তাদের সংসার চলে। কিন্তু সরকার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোন হস্তক্ষেপ না থাকায় এখানকার উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তাগুলোর অবস্থা খুবই করুন। প্রতি বর্ষা মৌসুমে লেবুর চাহিদা থাকে প্রচুর। কিন্তু রাস্তা গুলো কাঁচা এবং অতিরিক্ত খাঁড়া, সরু ও বর্ষাকালে বৃষ্টি হওয়ার কারণে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে গাড়ি চলাচলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ছোট বড় অনেক দুর্ঘটনা। এতে প্রাণহানি ঘটছে অনেকের। তিনি এসড়কের দ্রুত সমাধান চান। না হলে শিক্ষার্থী ও চাষীরা প্রতিনিয়তই দূর্ঘটনার শিকার হবে বলে তিনি জানান।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!