মোঃ কামরুল হাসান: কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি। এই শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। পাটি শিল্প বাংলাদেশের লোকাচারে জীবন ঘনিষ্ঠ ও ঐতিহ্যবাহী লৌকিক উপাদান। আগে এক সময় গ্রামের বাড়িতে অতিথিরা এলে প্রথমেই বসতে দেওয়া হতো পাটিতে। গৃহকর্তার বসার জন্যও ছিল বিশেষ ধরণের পাটি। আবার বিয়ের পর অনেকে মেয়ের জামাইর বাড়িতে অন্যান্য সামগ্রীর সাথে এই শীতলপাটি পাঠায়। বর্তমানে হিন্দুদের বিয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ শীতলপাটি। গরমকালে শীতলপাটির কদর একটু বেশিই। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের দুপুরে এই পাটি দেহ-মনে শীতলতা আনে। তবুও থেমে থাকেননি রেখা বেগম। জীবন জীবিকার তাগিদে এই পাটিতে স্বপ্ন বুনেন কুয়েত পল্লীর রেখা সহ আরো অনেকে। সরেজমিনে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউপির কুয়েত পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের প্রখর রোদ শেষে পড়ন্ত বিকালে ঘরের মেঝেতে পাটি বানানোর কাজে বেত ও পাটি পাতা নিয়ে বসে যান রেখা বেগম।বিভিন্ন রঙের বেত দিয়ে নান্দনিক পাটি বানানোর কাজ করেই যাচ্ছেন। পাটির সাইজ অনুযায়ী প্রতিটি পাটি তৈরি করতে তার সময় লাগে ৩ থেকে ১২ দিন। এই পাটি পাতাগুলো গ্রাম থেকে ১ পোজা ৩'শ থেকে ৩'শ'৫০ টাকায় কেনা হয়। এগুলো তৈরি করতে বিভিন্ন প্রকারভেদে বুননি খরচ হয়ে থাকে।এরপর স্থানীয় করের হাট, দারোগার হাট ও বারৈয়ার হাট বাজারে বিক্রি করেন। পাটির সাইজ অনুযায়ী ৩ হাত বাই ৪ হাত ১'শ'২০ থেকে ১'শ'৫০ টাকা, ৪ হাত বাই ৫ হাত ২'শ থেকে ২'শ'৫০ টাকা করে বিক্রি করেন। এছাড়াও বড় পাটি বুনতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। এটি বুনতে মজুরী হয় ৬'শ থেকে সাড়ে ৭'শ টাকা পর্যন্ত। যা পাইকারি বাজারে ১ হাজার ৫'শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন বলে দৈনিক স্টার লাইন'র এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি জানান।রেখা বেগম (৪৫) আরো বলেন, তার স্বামী মানু মিয়া একজন রিকশাচালক। রেখা বেগম এগুলো বুননের পর তার স্বামী মানু মিয়া প্রতি বাজারে বিক্রি করেন। তিনি এই শীতলপাটি গুলো ১৮ বছর ধরে তৈরি এবং বিক্রি করে ৪ ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকম দিন কাটছে তার। সেখানে আরো কথা হয় নুরের নবীর স্ত্রী বিবি ফাতেমা'র সাথে। ফাতেমা দৈনিক স্টার লাইন'কে বলেন, তিনি বাঁশের বেত দিয়ে তৈরি করছেন বাঁশের তৈরি মোড়া, চট, কোরা, হরেক রকমের ঝুড়ি, টুকরি, কুলা, খাঁচা, চালুন, মাছ-তরকারি ধোয়ার ঝাঁকা, মাছ ধরার চাঁই, আনতা, বেতের তৈরি পাটি, জায়নামাজ সহ প্রভৃতি পণ্য তৈরির কাজ। প্রতি বাঁশ ২'শ থেকে ২'শ'৫০ টাকা দরে কিনে এগুলো তৈরি করেন। প্রকারভেদে এগুলো তৈরি করতে তার সপ্তাহ খানেক সময় লাগে। এরপর সপ্তাহের প্রতি বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। প্রতিটি বাঁশের খাঁচা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বড় টুকরি ২'শ থেকে ৩'শ'৫০ টাকা, মুরগির খাঁচা ১'শ থেকে ১'শ'৫০ টাকা, মাঝারি মোড়া সাড়ে ৩'শ থেকে ৪'শ টাকা, পাটি বিভিন্ন সাইজ অনুযায়ী ২'শ থেকে ৮'শ টাকা, বেতের জায়নামাজ ৩'শ থেকে সাড়ে ৩'শ টাকা, চালুন ৭০ থেকে ১'শ'২০ টাকা, কূলা ২'শ থেকে ২'শ'৫০ টাকা দামে বিক্রি করেন। এগুলো বিক্রি করে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে দিন কাটছে তার। এভাবে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কুয়েত পল্লীর অনেকেই বাঁশের বেত ও পাটিপাতা দিয়ে শীতলপাটি তৈরি করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন জীবিকার নিমিত্তে কোন রকমে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!