২১ নভেম্বর, ২০২৪ || ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে ছাগলনাইয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে ৪ গ্রাম!
  • Updated Mar 11 2024
  • / 668 Read

 

 

 

*দপ্তরে দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেনা ভুক্তভোগীরা

*তলিয়ে গেছে ১৬০০ একর জমি

* ৪ হাজার কৃষকের মাথায় হাত

 

বিশেষ প্রতিনিধি: 

যুগের পর যুগ নিজের জমিতে কৃষি কাজ করেই সংসার চালিয়ে আসছেন লাঙ্গল মোড়া এলাকার মফিজ মিয়া। সুখেই চলছিল সংসার ও সন্তানদের ভরণ-পোষন, পড়ালেখা। কিন্তুু ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ব্রীজ সংলগ্ন স্থান থেকে শক্তিশালী যন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে তার ৩টি জমি তলিয়ে গিয়ে বৃহদায়তনের দিঘীতে রূপ নিয়েছে। সেখানে ফসল করাতো দূরের কথা, সেখানে মাঝে মধ্যে আশপাশের লোকজন জাল বসিয়ে মাছ ধরেন। এখন কৃষি কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়ে সন্তানদের পড়ালেখাতো দূরের কথা, ডাল ভাতেরও ব্যবস্থা হচ্ছেনা। চলেনা মফিজ মিয়ার সংসার। সব সময়ই আত্মীয় স্বজনের কাছে হাত পেতে সংসার চালাতে হচ্ছে। অবশিষ্ট্য থাকা সামান্য জমি বাঁচাতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য প্রশাসনের নিকট কয়েকবার আবেদন করেও লাভ হয়নি। বরং স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা লোকজনের হুমকিতে বাড়ি ছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই এখন আর প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেনা না মফিজ মিয়া। শুধু মফিজ মিয়া নয়। অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে এমন সমস্যায় পড়েছেন শুভপুর ও গোপাল ইউনিয়নের অন্তত ৪ হাজার কৃষক। তন্মধ্যে জয়পুর, লাঙ্গল মোড়া, কাটা পশ্চিম জোয়ার ও জয় চাঁদপুরসহ আশপাশের এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

 

গতকাল রবিবার বেলা ১১ টার দিকে শুভপুর ইউনিয়নের লাঙ্গলমোড়া এলাকার ভাঙ্গন কবলিত স্থানে অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ জানিয়ে বালু কান্ড বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থরা। এসময় তাদের সাথে কথা বলে উঠে আসে বালু কারবারিদের নানা অজানা কাহিনী। 

স্থানীয়রা জানান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত শুভপুর ব্রীজের নিকটবর্তী স্থানে বিগত প্রায় ৮ বছর যাবৎ ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন করে আসছে প্রভাবশালী চক্র। প্রথমদিকে বালু উত্তোলনের কারণে শুভপুর ব্রীজ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও প্রশাসনের অকার্যকর ভূমিকায় জনমনে নানা প্রশ্নের দেখা দেয়। বালু উত্তোলনের স্থানে অতিমাত্রায় গভীরতার সৃষ্টি হওয়ায় ক্রমন্বয়ে আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ ভাঙ্গনের দেখা দেয়। মসজিদ, মক্তব, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ভেঙ্গে বিলিন হতে থাকে। কয়েকবার স্থানীয়রা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানালেও তা কাগজে কলমেই থেকে যায়। বারবার মানববন্ধন করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। বরং যারা বালু উত্তোলনকারীদের বিরোধীতা করে তারা নানা ভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। 

একটি সূত্র জানায়, গত বছরের ২৫ অক্টোবর ডা: নুরুল আমিন হেলাল, এনামুল হক, আবুল কালাম, সাজেদুল করিম, দেলোয়ার হোসেন, ফজলুল করিম, মো: সাইফুল ইসলাম, মো: সুমনসহ এলাকার বেশ কিছু ব্যক্তির স্বাক্ষরিত একটি চিঠি জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তারকে দেয়া হয়। ওই চিঠিতে তারা মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ৯৯ নং কাটা পশ্চিম জোয়ার মৌজার নিকটবর্তী ফেনী নদীর সধকারী বেড়ী বাঁধের আশপার্শ্বের চট্টগ্রাম অঞ্চল ও ছাগলনাইয়া উপজেলার ১৩০ নং গোপাল ইউনিয়নের লাঙ্গলমোড়া মৌজার ফসলী ভূমি ভূমিদস্যু ও বালু উত্তোলনকারীদের কবল থেকে রক্ষার প্রার্থনা করেন। কিন্তুু কার্যত কোন প্রতিকার তারা পান নি। 

 

রবিবার জয়পুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফেনী নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারনে শুভপুর, জয়পুর, কাটা পশ্চিম জোয়াড়, জয় চাঁদপুর, লাঙ্গল মোড়া এলাকায় বিস্তীর্ণ ফসলী জমি ভেঙ্গে গভীর সমূদ্রের আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে লাঙ্গলমোড়া, শুভপুর ও জয়পুর এলাকায় এ ভাঙ্গনে অন্তত দেড় হাজার একর জমি তলিয়ে গেছে। কয়েক বছর আগেও এসব জমিতে বারো মাসই কোন না কোন ফসল উৎপাদন করা হতো। এখনও অবশিষ্ট্য সবুজ বিস্তীর্ণ জমিতে রয়েছে ডাল জাতীয় বিভিন্ন ফসলসহ তরমুজ, মিস্টি আলু, কুমড়া, খিরাসহ নানা জাতের ফসল। এখনই বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে আগামী মৌসূমেই এসব জমিও তলিয়ে যাবে। 

লাঙ্গলমোড়া এলাকার আমিন হাজী বাড়ির বাসিন্দা ডা: নুরুল আমিন হেলাল জানান, বালু তোলার কারনে ১০ শতাংশ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রতিদিনই ভাঙছে। আরো ২৯শতাংশ জমি রয়েছে। সেটাও হুমকির মুখে রয়েছে।

একই এলাকার বাসিন্দা ডা: ফারুক মিয়া জানান, নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বাড়ির কাছে চলে এসেছে। মসজিদ কবরস্থানও হুমকির মুখে। তারপরও প্রশাসন কর্ণপাত করছেনা।

শুভ নামের এক ব্যক্তি জানান, যারা বালু উত্তোলন করে, তারা প্রভাবশালী। তারা দিনের বেলায় এখানে বালু উত্তোলন না করলেও রাতের বেলায় শক্তিশালী যন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে। ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেনা। প্রশাসনও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মুহুরী সেচ প্রকল্পের স্কিম ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন জানান, ফসল আবাদের জন্য গভীর নলকুপ স্থাপন করেছিলেন। সেটি বালু কারবারীরা ফেলে দিয়ে বালু তুলেছে। শুধু তাই নয়, প্রকল্পের একটি পাইপও তলিয়ে গেছে। 

 

Tags :

Share News

Copy Link

Comments *