ছাগলনাইয়ার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত হাট করোনার পর থেকে ভিন্নরূপ
- Updated Dec 10 2023
- / 490 Read
নুর উল্লাহ কায়সার/এনায়েত উল্লাহ সোহেল:
ফেনীর সীমান্তবর্তী এলাকা ছাগলনাইয়ার পূর্ব মধুগ্রাম ও ভারতের সীমান্ত এলাকা শ্রীনগরে স্থাপিত সীমান্ত হাটে বাংলাদেশি অংশে ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। করোনাকালীন সময়ে প্রায় ৩ বছর সীমান্ত হাট বন্ধ থাকার পর পূনরায় ২০২৩ সালে দুই দেশের সিদ্ধান্তে চালু করা হয়। কিন্তু চালুর পর প্রবেশমূল্য বৃদ্ধি ও নীতিমালায় কঠোরতা প্রয়োগের কারণে ক্রেতার সংখ্যা ও বেচাবিক্রি কমে গেছে। ক্রেতার ভীড় কমে যাওয়ায় জমজমাট কেনাবেচায় ভিন্নতা দেখা গেছে। এক সময়ে এ বাজারের ক্রেতাদের চাপে বিক্রেতাদের দমফেলার ফুসরত না থাকলেও বর্তমানে শুনসান নিরবতার মধ্যেই চলে সাপ্তাহিক এ বাজার। জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে, গত ৪ মাসে বাংলাদেশি দোকানীরা ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বিক্রি করেছে। তার বিপরীতে ভারতের দোকানীরা বিক্রি করেছে ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। দের হয়রানি বন্ধে সতর্কতার সাথে কাজ করছে প্রশাসন।
জানা যায়, ২০২০ সালের ৩ মার্চ করোনা সমস্যার কারণে সীমান্ত হাট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ২০২৩ সালের ৯ মে ফের চালু করা হয় এ বাজার। তবে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা এবং প্রবেশ কার্ড বাজারের আগের দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। একজন ক্রেতা বাজার থেকে কি কি ভারতীয় পণ্য ক্রয় করতে পারবেন তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশি অংশে কঠোরতা আরোপ করায় ভারতীয় অংশেও জনসাধারণ প্রবেশে কঠোরতা শুরু করে বিএসএফসহ তাদের প্রশাসন। এমতাবস্থায় উভয় দেশের ক্রেতার সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
বর্ডার হাট পরিদর্শনে দেখা যায়, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পাতিল, মাছ, সবজি, শুটকী, মশার কয়েল, বীজ, চানাচুর, বিস্কুট, তরকারী ও ফল বিক্রি করছেন। অন্যদিকে ভারতীয় স্টলগুলোতে চাপাতা, কসমেটিক্স, মোনহরী, শাড়ি-থ্রিপিস, তেল, মসলাসহ আশপাশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন।
এরআগে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানো এবং বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি দেশের তৃতীয় সীমান্ত হাট হিসেবে চালু হয় ফেনীর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হাটটি। ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পূর্ব মধুগ্রাম ও ভারতের ত্রিপুরার শ্রীনগর এলাকার মাঝামাঝি স্থানে বাজারটি স্থাপন করা হয়। এখানে ২৬টি করে ৫২টি দোকান সমান ভাগে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব দোকানে সীমান্ত এলাকার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে উৎপাদিত পণ্য বেচাকেনা করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারের বাংলাদেশি ক্রেতাদের কাছে ভারতীয় মসলা, কসমেটিকস, দুধ, হরলিক্সসহ বিভিন্ন পণ্যের কদর বেশি। অন্যদিকে ভারতীয় ক্রেতাদের বাংলাদেশি শুঁটকি, মুদিমাল, বেকারি, ফল ও প্লাস্টিকের পণ্যের প্রতি ঝোঁক বেশি। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার এ হাটে ভারতীয় স্টল মালিকরা বাংলাদেশিদের তুলনায় দ্বিগুন/তিনগুন বিক্রি করে থাকেন।
কমেছে ক্রেতা; বেড়েছে প্রবেশমূল্য
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে সীমন্ত হাট চালুর সময় হাটের আশপাশের ৫ কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে ১ হাজার ৩শটি প্রবেশ কার্ড দেয়া হয়। প্রবেশমূল্য বাড়ানো ও ভারতীয় পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করায় এখন প্রতি সপ্তাহে ৫/৬শ ব্যক্তি নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রবেশ কার্ড গ্রহন করে থাকেন। তন্মধ্যে বাজারে প্রবেশ করেন ৪/৫শ ক্রেতা।
বাজারে আসা মোস্তফা মিয়া নামের এক ক্রেতা জানান, আগে ২০ টাকা দিয়ে দেশের সবাই বাজারে আসতে পারতো। এখন ৫০ টাকা দিয়ে শুধু সামান্য কিছু লোক বাজারে আসতে পারছে। তাছাড়া কোন ব্যক্তিকেই অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে বাজার থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছেনা। তিনি জানান, আমি পরিবারের জন্য ৩টি হরলিক্স ক্রয় করি। কিন্তু অতিরিক্ত হওয়ায় ১টি হরলিক্স চেকপোস্টে রেখে দিয়েছে। এসব কারণে সীমান্ত হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা কমেছে। তাছাড়া বাজারের আগের দিন উপজেলা শহরে আসতে হয় প্রবেশ কার্ডের জন্য। এটা একটা বিড়ম্বনা।
কড়াকড়িতে বেচাকেনায় ভাটা
বাংলাদেশি অংশের দোকানী বিধান চক্রদাস বলেন, করোনার পর নতুন করে সীমান্ত হাট চালু করা হয়েছে। কিন্তু দুই দেশের সীমান্ত প্রশাসনের কড়াকড়ির কারণে ক্রয়-বিক্রয় কমে গেছে। বেচাকেনা কমে যাওয়ায় কয়েকজন দোকানী হাটের দিনে দোকানে আসেন না। কিন্তু ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা তেমন কমেনি। বাংলাদেশী ক্রেতারা বস্তা ভরে হাজার হাজার টাকার বাজার নিয়ে যাচ্ছেন।
বাজারের স্থায়ী ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, সীমান্ত হাট থেকে বাংলাদেশি ক্রেতারা বস্তা ভরে মালামাল ক্রয় করেন। কিন্তু ভারতীয় ক্রেতারা যৎসামান্য বাজার করে বাজার ত্যাগ করেন। মূলত এ বাজারে বাংলাদেশিরা আসেন বাজার করতে। আর ভারতীয়রা আসেন বাংলাদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে।
নীতিমালার আলোকেই সীমান্ত হাট চলছে
-ইউএনও
ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম কমল জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া নীতিমালার আলোকে সীমান্ত হাট চালু রয়েছে। প্রতি মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত দর্শনার্থী কার্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিরা নির্ধারিত ফি দিয়ে বাজারে এসে ক্রয়-বিক্রয় করছেন। তিনি বলেন, সীমান্ত হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত, চোরাচালান প্রতিরোধ ও ক্রেতা-বিক্রেতা
Share News
-
সর্বশেষ সংবাদ
-
সর্বাধিক পঠিত