গবাদিপশু পালনে স্বপ্ন দেখছেন দাগনভুঞার খামারি মিস্টার
- Updated Mar 04 2024
- / 455 Read
নিজস্ব প্রতিবেদক:
শেষ করেছেন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী,এরপর শেষ করেছেন এলএলবি কোর্স। অফার পেয়েছেন ইউরোপ পাড়ি দেয়ার। সবকিছু পিছনে পেলে দেশমাতৃকার টানে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য হলেন খামারি। অবশেষে পূরণ হলো স্বপ্ন। আজ তিনি সফল খামারিদের একজন। বলছিলাম ফেনীর দাগনভুঞা উপজেলাধীন মাতুভুঞা ইউনিয়নের উত্তর আলীপুর গ্রামের বাগেরহাটের বাসিন্দা এমদাদ হোসেন মিস্টারের কথা।
সরেজমিনে মিস্টারের এইচ,এ,হাশেম এগ্রো ফার্মে গিয়ে কথা হয় তরুন এ উদ্দোক্তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, পড়াশোনা শেষ করে ইউরোপ যাওয়ার জন্য সকল বন্দোবস্ত সম্পন্ন করেছে আমার পরিবার কিন্তু নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসা ও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য কিছু একটা করার একান্ত উদগ্রীব মানসিকতার কারনে পশু পালন খামার করার জন্য মনস্থির করি। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মৎস্য ও পশু পালন বিষয়ে ৫৫তম কোর্সে ভর্তি হই। মুলত: ওখান থেকে হাতেখড়ি। ট্রেনিং এ আমাদের উন্নত জাতের ঘাস চাষের ট্রেনিং দেয়া হয় এবং ঘাসের চারা দেয়া হয়। পাশাপাশি গরুর দুধ থেকে দই তৈরীর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরপর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজে নেমে যাই। নিজের মালিকীয় সাড়ে তিনশত জায়গার উপর স্থপন করি মরহুম পিতা আবুল হাশেমের নামে এইচ,এ,হাশেম এগ্রো ফার্ম। প্রথমে গরু মোটাতাজাকরণের কাজ শুরু করি। ঐসব গরু থেকে মেয়ে বকনা বাছুর বেঁচে নেই। ঐসব বকনা বাছুর থেকে বংশ পরম্পরায় বর্তমানে ২৮টি গরু আছে। এ গুলো হলোস্টার ফিজিয়ান জাতের। ওদের মধ্যে থেকে ৭টি গরু দৈনিক ৮০ লিটার করে দুধ দিচ্ছে। এসব দুধ গুলোর মধ্যে কিছু দুধ ফেনীর তেমুহনীস্থ স্টার লাইন ফুড কর্তৃপক্ষকে লিটার ৬৫ টাকা দরে সরবরাহ করা হয়। বাকী দুধ দিয়ে আমরা দই তৈরী করে স্থানীয় দোকান গুলো ও বিভিন্ন উৎসবে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করে থাকি। তবে বর্তমান দ্রব্যমূলের কারনে এ দাম নিতান্ত নগন্য। অনেকটা বাধ্য হয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। ২০২১ সালে বাধ্য হয়ে ৪% সুদে দাগনভুঞার সিলোনীয়া বাজার কৃষি ব্যাংক থেকে ১৫ লক্ষ টাকা লোন নিই। পশুখাদ্যের চড়া মুল্য ও লেবার খরচ, বিদ্যুৎ খরচ মিলেয়ে হিসাবের কুল কিনারা হয় না।
এখানে লক্ষীপুর জেলা থেকে মো: নাছির ও মাসুদ নামে দুইজন রাখাল সার্বক্ষণিক কাজ করে থাকে তাদের কে বেতন বাবদ নাছির কে মাসিক ১৭ হাজার ও মাসুদ কে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া জার্মান ও নেপিয়ার ঘাস চাষ করতে হয়। দেশী খড় ক্রয় করতে হয়। গরুর জন্য পাতা ভূষি, খইল, লবন, দুধের ফিড উচ্চমূল্য ক্রয় করতে হয়। এসব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। খামার পরিচালনা ব্যায় অত্যাধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার সাথে শুরু করা অত্র উপজেলার ৫০টি অধিক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে বিদেশি গরু আমদানির কারনে এফএমডি ও ল্যাম্পিং রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬০০ শতাধিক গবাদিপশু মারা গেছে।
তিনি আরো জানান, ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় সরকার থেকে কিছুটা প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে মাঝে মধ্যে খোঁজ খবর নেয়া হয়। ডাকলে ওনারা রেসপন্স করে। তবে গরুর গোবর থেকে উৎপন্ন একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করতে চাচ্ছি এ জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিয়ে ও সহযোগিতা পাচ্ছি না। খামারিদের কথা মাথায় রেখে সরকার পশু খাদ্যের দাম না কমালে ধীরে ধীরে খামার বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবেনা। তিনি এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এ বিষয় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইয়াছিন আরাফাত সোহাগ জানান, মিস্টার আমাদের এলাকার গর্ব। তার খামারটি অত্র অঞ্চলের সবচেয়ে বড় খামার। ঈদুল আজহার সময় বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা মিস্টারের খামার থেকে গরু ক্রয় করে থাকে। সরকারের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খামারটি আরো এগিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাগনভুঞা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: সুজন কান্তি শর্মা জানান, আমরা খামারটি নিয়মিত পরির্দশন করে থাকি। এ ছাড়া বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। ফোন পেলে আমরা ছুটে যাই। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর থেকে খামারটির জন্য সব সময় সহযোগিতা করা হবে।
Share News
-
সর্বশেষ সংবাদ
-
সর্বাধিক পঠিত