সরকারী প্রণোদনা ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে ফেনীতে দ্বিগুন বেড়েছে সরিষা আবাদ
- Updated Feb 18 2024
- / 434 Read
নুর উল্লাহ কায়সার;
সহজে ও তুলনামূলক কম পরিশ্রমে উৎপাদন ও ভালো লাভ থাকায় ফেনীতে দিন দিন বাড়ছে সরিষা আবাদ। জেলায় তৈল জাতীয় এ শষ্যের আবাদ এক বছরের ব্যবধানে দ্বিগুন বেড়েছে। চলতি মৌসূমেও ফেনীতে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। এখন সরিষা ক্ষেতে শুধুই হলুদের আবায় ঝুলছে কৃষকের হাসি। আগামী মার্চের মধ্যেই ঘরে উঠবে সরিষাগুলো। দেশে ক্রমবর্ধমান সরিষা তেলের চাহিদা মেটাতে সরকার কৃষকদেরকে তৈল জাতীয় শষ্য উৎপাদনে প্রণোদনা দিয়ে আসছে। কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও কৃষি প্রনোদনায় ফেনীতে লাফিয়ে বাড়ছে সরিষা উৎপাদন।
কৃষি বিভাগ জানায়, ২০২২ সাল থেকে সরকার তৈল জাতীয় শষ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষি প্রণোদনার পরিমাণ বাড়িয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ফেনীতে সরিষা আবাদ বাড়াতে চলতি মৌসূমে ১৬ হাজার ২শ জন কৃষককে ৯০ লাখ টাকার কৃষি প্রনোদনা দেয়া হয়েছে। প্রণোদনার আওতায় তালিকাভুক্ত কৃষকদেরকে বিনামূল্যে সরিষা বীজ, জিএসপি ও এমওপি সার দিয়েছে সরকার। সরকার থেকে এসব সহায়তা পেয়ে কৃষকরা সরিষা আবাদে ঝুঁকেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিঠুন ভৌমিক জানান, সরিষা আবাদ বাড়াতে সরকারী ভাবে জেলায় ১৬ হাজার ২শ প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনার আওতায় ১ কেজি করে উন্নত জাতের সরিষার বীজ, ১০ কেজি করে জিএপি সার ও ১০ কেজি করে এমওপি সার বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র সরিষা আবাদের জন্য সরকারী কোষাগার থেকে ৯০ লাখ ৬৩ হাজার ৯শ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এসব প্রণোদনা কৃষকের হাতে পৌঁছার পর তারা আবাদে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
জেলায় বিগত ৫ বছরে সরিষা আবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালে ফেনীতে সরিষা আবাদ হয় ১হাজার ৬৮০ হেক্টর। ২০২১ সালে আবাদ হয় ১ হাজার ৯০৭ হেক্টর, ২০২২ সালে ১হাজার ৮৬৭ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়। কিন্তুু ২০২৩ সালে জেলায় সরিষা আবাদ লাফিয়ে বেড়ে দাড়ায় ৩ হাজার ৪৯৪ হেক্টরে। যা চলতি মৌসূমে ৬ হাজার ৬৬ হেক্টরে পৌঁছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসূমে সোনাগাজী উপজেলায় ২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়। একই ভাবে ফেনী সদর উপজেলায় ১৯৩০ হেক্টর, ছাগলনাইয়ায় ৫৮০ হেক্টর, ফুলগাজীতে ৬৩৫ হেক্টর, পরশুরামে ২২৬ হেক্টর, দাগনভূঞায় ২২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। জেলায় সর্বমোট ৬ হাজার ৬৬ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে।
এদিকে জেলায় সরিষা আবাদ বাড়াতে সরকার ১৬ হাজার ২শ প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনার আওতায় বীজ ও সার দিয়েছে। প্রণোদনা ও সার প্রাপ্তদের মাঝে ফেনী সদর উপজেলায় রয়েছে ৭১১০ জন, ছাগলনাইয়ায় ১০১০ জন, ফুলগাজীতে ২০০০ জন, পরশুরামে ৫৭০ জন, দাগনভূঞায় ৬৬০ জন, সোনাগাজীতে ৪৮৫০ জন। প্রণোদনার আওতায় থাকা কৃষকরা সরকার থেকে বিনামূল্যে প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা আবাদের জন্য ১ কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার পেয়েছেন। শুধুমাত্র ফেনী জেলাতেই সরকার সরিষা প্রণোদনার আওতায় ১৬ হাজার ২০০ কেজি বীজ, ১ লাখ ৬২ হাজার কেজি জিএপি সার ও ১ লাখ ৬২ হাজার কেজি এমপি সার দেয়া হয়েছে। ফেনীতে সরিষা আবাদের জন্য সরকারী ভাবে প্রণোদনা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে ব্যয় হয়েছে ৯০ লাখ ৬৩ হাজার ৯ শত টাকা।
সোনাগাজীর চরছান্দিয়া ইউনিয়নের কৃষক আহমেদ করিম বলেন, শীতকালীন অন্যান্য ফসল উৎপাদনে সার্বক্ষণিক তত্বাবধান করতে হয়। কয়েকদিন পর পর শ্রমিক দিয়ে ক্ষেতে কাজ করাতে হয়। কিন্তু সরিষা আবাদের জন্য দুই চাষ দিয়েই জমিতে বীজ চিটিয়ে দিলেই চলে। পরে জমির উৎপাদিত ফসল থেকে দানা, খৈল ও তেল ৩ ধরনেই বিক্রি করা যায়। বর্তমানে বাজারে সরিষা তৈল বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩৫০ টাকা, দানা বিক্রি হয় ১শ থেকে ১২০ টাকা আর খৈল বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে।
তিনি জানান, চলতি মৌসূমে তিনি ১৫ কানি জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এতে তার প্রায় ২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ফসল ঘরে তোলার পর তিনি বর্তমান দর হিসেবে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন।
ফেনী সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, এক সময়ে শুধুমাত্র সৌখিন কৃষকরা জমিতে সরিষা আবাদ করতেন। কিন্তু বর্তমানে সরকারী প্রণোদনা ও ভালো লাভ পাওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা সরিষা আবাদে ঝুঁকেছেন। তিনি বলেন, বিগত বছর ফেনীতে প্রতিশতকে সাড়ে ৪ কেজি সরিষার দানা উৎপাদন হয়। যার থেকে ১ দশমিক ৬ কেজি তেল ও ২ দশমিক ৯ কেজি খৈল পাওয়া গেছে। আমাদের দাপ্তরিক হিসাব মতে, প্রতি শতকে সরিষা আবাদে কৃষকের সর্বসাকুল্যে খরচ হয়েছে ১২৭ টাকা। আর উৎপাদিত ফসল বিক্রি হয়েছে ৩শ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত।
ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, চলতি মৌসূমের শুরুতে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সরিষা আবাদে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তারপরও গতবছরের তুলনায় এবার সরিষা আবাদ বেড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, দেশে ভোজ্য তেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের লক্ষে সরকার তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে অধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সেই আলোকে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। প্রণোদনা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শে জেলায় দিনদিন সরিষা আবাদ বাড়ছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকরাও খুশি।
Share News
-
সর্বশেষ সংবাদ
-
সর্বাধিক পঠিত