২১ নভেম্বর, ২০২৪ || ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
ছাগলনাইয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যানের বেত্রাঘাতের ছবি ভাইরাল জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
  • Updated Jan 24 2024
  • / 481 Read

 

বিশেষ প্রতিনিধি :
ফেনীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রকে স্কুল অফিসে ডেকে বেত্রাঘাত করার অভিযোগ উঠেছে ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলের বিরুদ্ধে। 


মঙ্গলবার এঘটনার পর ছাত্রকে বেত্রাঘাত করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নিন্দার ঝড় ওঠে। একজন উপজেলা চেয়ারম্যান কিভাবে প্রকাশ্যে একজন কিশোরকে বেত্রাঘাত করে আইন হাতে তুলে নিলেন, তা নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার চাঁদগাজী হাইস্কুল এন্ড কলেজের অফিস কক্ষে এঘটনাটি ঘটেছে। ওই ছাত্রের নাম নাজিম উদ্দিন। তিনি উপজেলার মাটিয়াগোদা গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে। সে চাঁদগাজী হাইস্কুল এন্ড কলেজের অস্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।  
স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন যাবত চাঁদগাজী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে উত্ত্যক্ত করে আসছে নিজাম। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষিকা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালে স্কুলের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল ওই ছাত্রকে স্কুল অফিসে ডেকে এনে তাকে বেত্রাঘাত করে আগামীতে এ ধরনের কাজ করবেনা বলে প্রতিশ্রুতি নেন। পুরো বিষয়টি ভিডিও করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। 
ভিডিওতে দেখা যায়, চাঁদগাজী হাইস্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল ওই অভিযুক্ত ছাত্র নাজিম উদ্দিনকে শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণের কারণ জিজ্ঞেস করেন। পরে তিনি ছাত্রের দুই হাতে বেত্রাঘাত করেন। বেত্রাঘাত করতে করতে বলেন, তোমাদের জন্য মেয়েরা স্কুলে আসতে পারে না। তুমি এ সাহস পাও কোথায়? শিক্ষিকা তোমার মায়ের মতো। তুমি যে কাজ করেছ ভবিষ্যতে আর এই কাজ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দাও। সামনে কান ধর। কান ধরে বলো; আমি আর জীবনে ইভটিজিং করবো না, চারদিকে ঘুরে ঘুরে বল আমি আর জীবনে ইভটিজিং করবো না। জীবনে এই কাজ আর করব না। তোমার সাথে আর কে কে আছে এদের নাম বল। এ সময় ওই ছাত্র জনি ও নাঈম নামে দুইজনের নাম উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানান।
এসময় সোহেল চেয়ারম্যান তাকে প্রতিজ্ঞা করান-  ইভটিজিং করা পাপ, খারাপ কর্ম, আমি জীবনে এ কাজ করব না। মেয়েরা সবাই আমার বোন। এদেরকে পড়ালেখার সুযোগ করে দেব। আর কখনো ইভটিজিং করবো না। আমি ভালো হয়ে যাব। পরে ছেলেটি তার পা ছুঁয়ে মাফ চান। তখন ওই ছাত্রের মোবাইল ফোন ফেরত দেয়া হয়।
এ সময় দেখা যায় কয়েকজন লোক এই ঘটনাটির ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তী সময় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নানা জন নানা মন্তব্য করতে থাকে। অনেকেই বলছে তাকে শাসন করার দরকার আছে। তবে তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে তাকে হেয় করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। শাসন করার নামে একজন কিশোরকে শুধরানোর সুযোগ না দিয়ে ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়াও অপরাধ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদগাজী হাইস্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, ইভটিজিং এর ঘটনায় ঐ শিক্ষক আমাকে বিচার দিলে আমি প্রাথমিকভাবে ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রটিকে শাসন করি। বড় কোন ঘটনা না হওয়ায় আইনের আওতায় নিয়ে আসিনি, আইনের আওতায় নিয়ে আসলে ছেলেটির ভবিষ্যৎ খারাপ হতো এজন্য নিজেই সামান্য শাসন করেছি। এই ছাত্রকে সতর্ক করার মাধ্যমে অনেক বখাটে কিশোর সতর্ক হবে। তারা ইভটিজিং এর পথ থেকে ফিরে আসবে।


ছাগলনাইয়া চাঁদগাজী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ তাহেরা বেগম বলেন, একজন শিক্ষককে শুক্রবার ইভটিজিং এর ঘটনায় স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ছেলেটিকে সামান্য প্রহার করে শাসন করেন এবং ভবিষ্যতে না করার জন্য বলেন। ভিডিও ভাইরালের বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান।
ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, যে কেউ ইচ্ছে করলেই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। যদি কেউ অন্যায় করে তাকে প্রশাসনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

Tags :

Share News

Copy Link

Comments *