দমে যাননি ওলি মিয়া, ৪৮ বছর ধরে চলছে এক হাতের যুদ্ধ
- Updated Jan 11 2024
- / 436 Read
চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি;
ওলি মিয়া। ১২ বছর বয়সে বাড়ির পাশের বৈদ্যুতিক লাইনে বিদ্যুৎষ্পৃষ্ঠ হয়ে বাম হাত হাড়ান। সেই থেকে এক হাত দিয়েই চলছে তার জীবন-জীবিকা। দমে যাননি তিনি। প্রতিদিন চা দোকান বিক্রি করেই চলছে স্ত্রী ও সন্তানদের ভরন-পোষণ। ভিক্ষাবৃত্তি না করে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করায় তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে সকলে। ওলি মিয়া চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের কোমাল্লা গ্রামের মরহুম আবদুস সালামের ছেলে। কথা হয়, ওলি মিয়ার সঙ্গে।
তিনি জানান, ওলি মিয়া ১৯৭৬ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে বাড়ির পাশের ৩৩ হাজার কেভি বৈদ্যুতিক খুটির তারে বিদ্যুৎষ্পৃষ্ঠ হন। তখন তিনি ৩ মাস কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসাকালিন সময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ তার বাম হাত কেটে ফেলেন। চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরে আসলে তিনি সকলের নিকট অবহেলায় পরিণত হন। অবহেলার তোয়াক্কা না করেই ওলি মিয়া পাশ^বর্তী বীরচন্দ্রনগর ইসলামিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখান থেকে দাখিল পরীক্ষা পাশ করে আলিম পড়া অবস্থায় বাবা-মায়ের সাথে বাড়ির কাজে জড়িয়ে পড়েন। ওই সময় তিনি এক হাত দিয়ে ভারতীয় ছন ও লাকড়ি বাংলাদেশে এনে বিক্রি করে আয়ের টাকা পরিবারের কাজে লাগাতেন। পরিবারের লোকজন যাতে অবহেলা না করে, সেজন্য তিনি সার্বক্ষণিক কাজের মধ্যে থাকতেন এবং পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেন। ১৯৯৪ সালে পৌরসভার গোমারবাড়ি গ্রামে বিয়ে করেন। বিয়ের কয়েক বছর পর পরিবার থেকে তাকে আলাদা করে দেয়া হয়। শুরু হয় তার নতুন জীবন সংগ্রাম। ওই সময় একটি এনজিও থেকে ঋণ উত্তোলন করে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি টিনসেড ঘর তৈরি করেন। পরবর্তীতে বাড়ির পাশে একটি ছোট দোকান দিয়ে চা-রুটি বিক্রি শুরু করেন। ওই দোকানে প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর আনুমানিক ১২টা পর্যন্ত চা-বিস্কিট ও রুটি বিক্রি করেন। দুপুর বেলায় তিনি স্ত্রীকে সাথে নিয়ে বাড়ির পাশের মানুষের বর্গা জমিতে ধান লাগান ও শাক-সবজি করেন। সপ্তাহের শুক্র ও মঙ্গলবার বিকেল বেলায় স্থানীয় হাড়িসর্দার বাজারে ভ্রাম্যমাণ চা দোকান দিয়ে চা, বিস্কিট ও রুটি বিক্রি করেন। এভাবেই চলছে এক হাত হাড়ানো ওলি মিয়ার জীবিকা নির্বাহ। তিনি ডান হাত দিয়েই দোকানের মালামাল উঠা-নামা ও সবজি ক্ষেতে কাজ করেন। ওলি মিয়া দুই ছেলে ও তিন মেয়ে সন্তানের জনক।
তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালে স্থানীয় সাংসদ মুজিবুল হক একটি পঙ্গু ভাতা কার্ড প্রদান করেন। নিয়মিত পঙ্গুভাতা পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুজিবুল হক এমপির নিকট আমার দোকান ঘরটি পুণনির্মাণে সহযোগিতার দাবি জানাচ্ছি।
ওলি মিয়ার স্ত্রী নারগিস বেগম বলেন, ‘পারিবারিক মতামতের ভিত্তিতে ওলি মিয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। কিছু দিন পর শ^শুড় বাড়ির লোকজন আমাদেরকে আলাদা করে দেয়। এরপর থেকে আমি স্বামীকে সবসময় উৎসাহ দিতাম, তিনি কাজ করেই পরিবারের ভরণ-পোষণ মিটাচ্ছেন’।
ওলি মিয়ার চাচা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আবুল কালাম মোঃ নুরুল আলম খাঁন বলেন, ‘ওলি অত্যন্ত গরীব। ভাঙা রিকশা হাড়িসর্দার ও মিরশ^ান্নী বাজারে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ চা দোকান বসিয়ে রোজগার করেন। তিনি কারো কাছে টাকা-পয়সা খোজেন না। ভিক্ষা করে না। এক হাত দিয়ে খেটে খায়’।
হাড়িসর্দার বাজারের দোকানদার আবুল কালাম বলেন, ‘ওলি মিয়া এক হাত দিয়ে চা বিক্রি করে খায়। কারো কাছে ভিক্ষা করে না। তাকে স্যালুট জানাই’।
হাড়িসর্দার বাজারের টাইলস্ ব্যবসায়ী এম এ বাশার নয়ন বলেন, ‘ওলি মিয়া শুক্র ও মঙ্গলবার হাড়িসর্দার বাজারে চা বিক্রি করে চলেন। কখনো কারো টাকা-পয়সা ভিক্ষা চায় না’। এক হাত দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, তিনি একজন ভালো মানুষ।
Share News
-
সর্বশেষ সংবাদ
-
সর্বাধিক পঠিত