২১ নভেম্বর, ২০২৪ || ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
ফেনীর যে সম্মুখযুদ্ধ পাঠ্য হয়েছে দেশে দেশে আজ ফেনী মুক্ত দিবস
  • Updated Dec 06 2023
  • / 441 Read

 

নিজস্ব প্রতিনিধি, 
আজ ৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে ২ নম্বর সেক্টরের অধীন ফেনী জেলা (তৎকালীন ফেনী মহকুমা) বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসরদের কবল থেকে মুক্ত হয়। ফেনীতে বিজয়ের পতাকা উড়ান বীর যোদ্ধারা। ফেনীর বিলোনীয়ার সম্মুখযুদ্ধটি দেশের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসে মহা মাইলফলক হয়ে রয়েছে। এ যুদ্ধটি বাংলাদেশ, ভারত, ও পাকিস্তানি মিলিটারি একাডেমিগুলোতে পাঠ্যসূচী ভূক্ত করা হয়েছে।   
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর বাহিনীর নৃশংস বর্বরতায় ক্ষত-বিক্ষত ফেনী শহরে স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালিরা বিজয়ের নিশান উড়িয়ে উল্লাস করে স্বজন হারানোর কান্না ভুলে গিয়েছিল এদিনে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও ফেনীতে চিহ্নিত আটটি বধ্যভূমি এখনো অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে। 
মুক্তিযুদ্ধকালে ফেনী অঞ্চলের মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম বীর বিক্রম ভারতের বিলোনীয়া ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল থেকে ১০ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের অভিযান চালান। এসময় বিলোনিয়া, পরশুরাম, মুন্সিরহাট, ফুলগাজী হয়ে যুদ্ধ করতে করতে এগোতে থাকলে পর্যুদস্ত হয়ে ফেনীর পাকহানাদার বাহিনীর একটি অংশ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী হয়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের রাস্তা ধরে এবং অপর অংশ শুভপুর ব্রিজের ওপর দিয়ে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়।


অপরদিকে মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) ফেনী মহকুমা কমান্ডার সাবেক ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপির নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দাগনভুঞা, রাজাপুর, সিন্দুরপুর হয়ে শহরের দিকে এগোতে থাকে।
মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পাকহানাদাররা ৫ ডিসেম্বর রাতে কুমিল্লার দিকে পালিয়ে যায়। সে সময় ফেনী অবাঙ্গালি মহোকুমার প্রশাসক বেলাল এ. খানও পাকবাহিনীর সঙ্গে চলে যান।
ফেনী হানাদার মুক্ত হওয়ার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে সড়ক ও রেল পথে হানাদার বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 
৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃত্বে দলে দলে ফেনী শহরে প্রবেশ করে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিতে থাকেন। শহরবাসী ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের সশস্ত্র মহড়া দেখেছিল। ফলে সকালে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান শুনে অনেকে হকচকিত হয়ে ওঠেন। অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের এ শ্লোগান প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের মিছিলে দেখতে পান। তখন লোকজনের ভুল ভাঙতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সাধারণ মানুষ ফেনী শহরে মিছিলে যোগ দিতে শুরু করেন। জেলার বিভিন্ন স্থানে আটটি বধ্যভূমিতে শহীদদের লাশ শনাক্ত করতে বা তাঁদের কবর চিহ্নিত করতে ছুটে বেড়িয়েছিলেন স্বজনহারারা।


মুক্তিযুদ্ধে ফেনীর মুন্সির হাটের মুক্তারবাড়ী ও বন্ধুয়ার প্রতিরোধ যুদ্ধ ইতিহাসে সমাদৃত হয়েছে। এ রণাঙ্গনে সম্মুখ যুদ্ধকৌশল বাংলাদেশ, ভারত, ও পাকিস্তানি মিলিটারি একাডেমিগুলোতে পাঠ্যসূচির অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা এ রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের অহংকার ও গর্বের বিষয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ফেনী সরকারি কলেজ, তৎকালীন সিও অফিসসহ কয়েককটি স্থানে স্বাধীনতাকামী নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছিল। স্বাধীনতার পর জেলার বিভিন্ন স্থানে আটটি বধ্যভূমিতে শনাক্ত করা হয়েছে। 
দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজন করেছে নানা আয়োজন। এছাড়া বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন ফেনী জেলা শহরে আলোচনা সভা ও বিজয় র‌্যালী বের করবে। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উদযাপনের নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

Tags :

Share News

Copy Link

Comments *