সোনাগাজীতে পুলিশের বিরুদ্ধে কৃষকের ধান কেটে বিক্রির অভিযোগ
- Updated Dec 04 2023
- / 476 Read
সোনাগাজী প্রতিনিধি;
সোনাগাজীতে পুলিশের বিরুদ্ধে আবদুস সালাম নামে এক কৃষকের দুই একর ২০ শতক জমির ধান কেটে স্থানীয় মাইন উদ্দিন নামে একব্যক্তি কাছে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্র ও শনিবার উপজেলার দক্ষিণ চর দরবেশ এলাকার আদর্শগ্রামের কৃষক আবদুস সালামের মালিকানাধীন জমিতে এঘটনা ঘটে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও স্থানীয়রা জানায়, ১৯৮৩-৮৪সালে উপজেলার দক্ষিণ চর দরবেশ মৌজার আদর্শগ্রাম এলাকায় সাহাব উদ্দিন ও আবদুর রহমান নামে দুই ব্যক্তি দুই একর ২০ শতক করে সরকারিভাবে জমি বন্দোবস্ত পান। এরপর সাহাব উদ্দিন দিয়ারা ১৪১০ এর ১০৮ দাগের বন্দোবস্তিয় জমি আদর্শগ্রাম এলাকার আনোয়ার হোসেন, দুলাল হোসেন ও দেলোয়ার হোসেনের কাছে বিক্রি করেন। বিক্রির সময় তাঁরা ভুল বশত কাগজে দিয়ারা ১৪১০/১০৮ এর স্থলে ১২০ লিখে ফেলেন। পরে অবশ্যই তা সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু ভুল সংশোধন হলেও আনোয়ার হোসেন ও তাঁর ভাইয়েরা তা অস্বীকার করে ১২০দাগের জমিও দখল করার পায়তারা করেন। আর একই এলাকার আবদুর রহমানের দুই একর ২০শতক জমি আবদুস সালাম নামে আরেক কৃষক ক্রয় করেন। দীর্ঘ ২৫-৩০বছর ধরে আবদুস সালাম ক্রয়কৃত জমিতে চাষাবাদ করে আসছে। এতে কোন সমস্যা হয়নি।
কৃষক আবদুস সালাম বলেন, উপজেলার দক্ষিণ চর দরবেশ মৌজার দিয়ারা ১৪১০/১১৭ এবং বিএস খতিয়ান নম্বর ১৬৮১ এর ৭২১৯ দাগে দুই একর ২০শতক জমি ভোগ দখলে থেকে চাষাবাদ করে আসছেন। অথচ দিয়ারা ১৪১০/ ১২০ এবং বিএস খতিয়ান নম্বর ৬৭৮এর ৭১১৯ দাগ উল্লেখ করে উক্ত জমির মালিকানা দাবি করে স্থানীয় আনোয়ার হোসেন আদালতে একটি মামলা করেন। তদন্তে ও সাক্ষ্য প্রমানে মালিকানা প্রমানিত না হওয়ায় আদালত তা খারিজ করে দেন। এরপর গত বছর নভেম্বর মাসে আবারও আনোয়ারের ভাই দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে আদালতে আরেকটি মামলা করেন। পরে আদালত বিরোধ মীমাংসা ও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে ১৪৫ধারা জারি করে ওসি সোনাগাজীকে রিসিভার নিয়োগ দিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন।
আবদুস সালাম বলেন, প্রতি বছর ধানসহ যে কোন ফসল জমিতে চাষাবাদ করার সময় কেউ বাধা দেয় না। ফসল কাটার সময় হলে আনোয়ারসহ তাঁর ভাইয়েরা বাধা দিয়ে অযথা একটি মামলা দায়ের করে তাঁকে হয়রানি করে থাকে। চলতি বছরও ধান কাটার সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেলোয়ার হোসেন আবারও আদালতের দ্বারস্থ হয়। এরপর আদালত আবারও ১১অক্টোবর ওসিকে রিসিভার নিয়োগ দিয়ে বিরোধ পূর্ণ সম্পত্তির হালনাগাদ প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দেন। এরপর থানা পুলিশ উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে কোন সমাধান করতে পারেননি।
কৃষক আবদুস সালাম আরও বিষয়টি সমাধান ও চাষকৃত জমি ধান তাঁকে দিয়ে দেওয়ার কথা বলে সোনাগাজী মডেল থানার এসআই আবু বকর তাঁর কাছ থেকে ৩৮ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। মামলায় ১২০দাগ উল্লেখ, থাকলেও উল্টো বাদির কথা ধরে গত শুক্র ও শনিবার সকালে শ্রমিক দিয়ে তাঁর ১১৭দাগের জমির ধান কেটে তিনি স্থানীয় মাইন উদ্দিন নামে একব্যক্তির কাছে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জামশেদ আলম বলেন, আবদুস সালামের জমি হচ্ছে দিয়ারা ১৪১০এর ১১৭দাগে আর আনোয়ার হোসেনদের মামলায় জমি উল্লেখ করা হয়েছে দিয়ারা ১৪১০এর ১২০দাগে। দিয়ারা, খতিয়ান ও বিএস দাগ মিল না থাকলেও আনোয়ার হোসেন ও তাঁর ভাইয়েরা আবদুস সালামের চাষকৃত জমি দাবি করে মামলা করেছে। ঘটনাটি সমাধান করতে তিনি একাধিকবার বৈঠক করেছেন। আনোয়ার হোসেনসহ তাঁর ভাইয়েরা শালিশের সিদ্ধান্ত না মানায় বিষয়টি সমাধান করা যায়নি।
স্থানীয় সমাজ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন বলেন, সোনাগাজী মডেল থানার এসআই আবু বকরের কাছ থেকে শনিবার রাতে তিনি ৬০ হাজার টাকা দিয়ে প্রায় ৭০ মণ ধান খড়সহ কিনেছেন। তবে ওই ধানগুলো কৃষক আবদুস সালামের বলে শুনছেন।
সোনাগাজী মডেল থানার এসআই আবু বকর বলেন, তিনি কোন অন্যায় করেননি। বাদি দেখানো মতে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে আদালতের নির্দেশ পালন করেছেন। দুই পক্ষকে শান্ত করতে ধান কেটে তিনি বিক্রি করেছেন। তবে এ কাজে আবদুস সালামের কাছ থেকে কোন টাকা নেননি।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান ইমাম বলেন, আদালত তাঁকে উক্ত জমিতে বিরোধ থাকায় রিসিভার নিয়োগ দিয়েছেন। এখন এ জমির মালিক তিনি। তাই উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গে আশঙ্কা থাকায় তাঁর নির্দেশে এসআই আবু বকর ধান কেটে বিক্রি করে টাকা তাঁর কাছে জমা দিয়েছে। তবে জমিটি ১১৭ নাকি ১২০ দাগের তা নির্ণয় করবে আদালত।
Share News
-
সর্বশেষ সংবাদ
-
সর্বাধিক পঠিত