নির্মাণের ১০ বছরেও চালু হয়নি মঙ্গলকান্দি ২০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল
- Updated Nov 07 2023
- / 471 Read
নুর উল্লাহ কায়সার/এস.এন আবছার:
নির্মাণের ১০ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত চালু করা যায়নি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। ২০১৩ সাল থেকে অব্যবহৃত থাকায় এখানকার অবকাঠামো, আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি পরিত্যাক্ত ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাজে আসছেনা ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি। হাসপাতালটি নির্মাণের সময় স্বাস্থ্যসেবা নাগালের মধ্যে আসছে ভেবে জনসাধারণ খুশি হলেও তা এখনও পর্যন্ত স্বপ্ন রয়ে গেছে। ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে হাসপাতালটিকে আইসোলেশন কেন্দ্র করে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সেন্ট্রাল অক্সিজেন পদ্ধতি চালু করা হলেও সেখানে কোন রোগীর দেখা মেলেনি। এমতাবস্থায় হাসপাতালটি প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত চালু করার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নির্মাণের একদশক পরও হাসপাতালটি চালুর বিষয়ে আশারবানী শোনাতে পারছেন না স্থানীয় সাংসদসহ জনপ্রতিনিধিরা। বিষয়টি নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়হীনতাকে দুষছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ফেনী সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য জেলা শহর ফেনী অথবা উপজেলা শহর সোনাগাজীতে যেতে হয়। যাতায়াতের দূরত্ব থাকায় স্বাস্থ্যসেবা নিতে রোগী ও স্বজনদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সাধারণ মানুষের সুবিধা চিন্তা করে ফেনী-সোনাগাজী আঞ্চলিক সড়কের মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের মাঝে উৎসাহ ও স্বস্থি দেখা দিলেও বছরের পর বছর তা চালু না হওয়ায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নির্মাণকৃত হাসপাতালটি দীর্ঘ ১০ বছরেও চালু করতে না পারায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে এখানকার জনসাধারণের তেমন কোন সম্পর্ক নেই; তার সাথে মানুষ সুখ-দু:খ ভাগ করার সুযোগ পান না। তাই তিনি নাগরিক সুবিধা-অসুবিধা জানতে পারছেন না। এ বিষয়ে চেষ্টা-তদবীরও করছেন না। অন্যদিকে আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও এসব বিষয়ে তেমন সক্রিয় ভূমিকায় নেই। জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয় না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত চালু করা যায়নি। ফলে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত ভবন, যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রগুলো মানুষের কাজে আসছেনা। এগুলো দিনদিন নষ্ট ও পরিত্যাক্ত হয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১০ সালে মির্জাপুরে ফেনী-সোনাগাজী সড়কের পূর্বপাশ লাগোয়া ৩ একর জমিতে ২০ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়। একই বছরের ১৮ আগস্ট দরপত্র আহবান করা হলে চট্টগ্রামের মেসার্স রয়েল অ্যাসোসিয়েট এন্ড দেশ উন্নয়ন লিমিডেট নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। ৫ কোটি ৯২ লাখ ৮৮৭ টাকায় সেখানে নির্মাণ হয় হাসপাতাল ভবন, ডরমিটরীসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণকৃত অবকাঠামোগুলো স্বাস্থ্য বিভাগের নিকট হস্তান্তর করে। সেই থেকে ১০ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত হাসপাতালটি চালু করা হয়নি। হাসপাতালটি চালু হলে সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি, চর মজলিশপুর, বগাদানা, নবাবপুর ও চরদবেশসহ ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের অন্তত ২ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সহজ হয়ে উঠতো। হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে এখনও তাদেরকে সোনাগাজী অথবা ফেনী জেলা শহরে রোগী নিয়ে ছুটতে হয়। এতে করে রোগী ও স্বজনরা অর্থিক ও নানা ক্ষতির সম্মুখিন হন। তবে ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের মহামারীর সময় তড়িগড়ি করে হাসপাতালটিকে আইসোলেশন কেন্দ্র করা হয়। ওই সময়ে সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে হাসপাতালে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালু করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কিছু জনবলও দেয়া হয়। কিন্তুু এতো আয়োজনের পরও ওই হাসপাতালে কোন রোগী ভর্তি হয়নি। ওই সময়ে জরুরী ভিত্তিতে ব্যয়কৃত ৮ লাখ টাকা অপচয় করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।
সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: উৎপল দাশ জানান, ২০ শয্যার হাসপাতালটি চালুর জন্য বারবার চিঠি দেয়া হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এটি চালু করতে না পারলেও সেখানে বহি:বিভাগ চালু রাখা হয়েছে। বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিতে একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন উপসহকারী কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মকর্তা ও একজন পিয়ন ডেপুটেশনে কর্মরত রয়েছেন। তারা আউটডোরে আগত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে হাসপাতালটি পরিদর্শনে দেখা যায়, ফেনী-সোনাগাজী সড়কের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে হাসপাতালের প্রধান ফটক। ভেতরে প্রবেশ করলেই নজর কাড়ে হাসপাতালের প্রধান ভবনটি। তার পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে হাসপাতালের চিকিৎসক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আরও ৪টি আবাসিক ভবন। হাসপাতালটিতে জনবল পদায়ন না হওয়ায় বৃহদায়তনের চিকিৎসক ডরমিটরীতে থাকেন মাত্র ১ জন চিকিৎসক। নার্স ডরমিটরীতে থাকেন ২/৩ জন। নির্মাণের পর থেকে তালাবদ্ধ রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মাণকৃত আরও ২টি আবাসিক ভবন। ব্যবহার না হওয়ায় ভবনগুলোর দরজা, জানালা এবং জানালার কাঁচগুলো ভেঙ্গে পড়েছে অনেক আগে। অনেকটা পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনগুলো। একই অবস্থায় পড়ে আছে হাসপাতালের গার্ড রুম, গ্যারেজ ও অন্যান্য স্থাপনা। কিন্তু যেজন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এসব নির্মাণ করা হয়েছে শুধু নেই সেই সেবাগ্রহীতাগণ।
হাসপাতালটিতে একজন চিকিৎসক, একজন স্যাকমো ও একজন পিয়ন ডেপুটেশনে দিয়ে বহি:বিভাগ চালু করা হলেও এখানে মাঝে মধ্যে তারা আসেন। বাকী সময় এক পিয়নেই চলে সরকারী বিনামূল্যে ঔষদের স্লিপ বিতরণ, ঔষধের নাম লিখা ও ঔষধ বিতরণের কাজ। দীর্ঘদিন থেকে এমন অভিযোগ থাকলেও তার সত্যতা মেলে সরেজমিনে পরিদর্শনকালে।
হাসপাতালের মূল ভবনে প্রবেশ করে দেখা যায়, নাছির উদ্দিন নামের এক অফিস সহায়ক বহি:বিভাগে আগত রোগীদের স্লিপ লিখে দিচ্ছেন। বিনামূল্যে ঔষধও দিচ্ছেন। আবার কিছু রোগীকে স্লিপ দিয়ে ডাক্তার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করছেন।
নাছির জানান, হাসপাতালে রেবেকা হক নামের একজন চিকিৎসক আছেন। তিনি সোনাগাজী হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। দেরিতে হলেও হাসপাতালে আসবেন। তাই জটিল রোগীদের স্লিপ দিয়ে অপেক্ষা করতে বলছি। আরা যারা জ¦র, সর্দিসহ স্বাভাবিক সমস্যায় এসেছেন তাদেরকে সরকারী বিনামূল্যের ঔষধ দিয়ে দিচ্ছি। এখানে একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) থাকলেও আজ ছুটিতে আছেন। তাই আমি বাকী কাজগুলো করছি।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উৎপল দাশ বলেন, হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক উপজেলা হাসপাতালে দায়িত্বপালন করার প্রশ্নই উঠেনা। সেখানে কর্মরত স্যাকমো আমার কাছে ছুটির আবেদন করেননি আমি ছুটিও দেইনি। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।