যে কোন মূল্যে কোরবানীর চামড়ার বাজার বিপর্যয় রুখতে হবে
- Updated Jun 26 2023
- / 182 Read
খন্দকার হাসনাত করিম (পিন্টু): গত কোরবানীর ঈদের চামড়া শিল্পে এক অহেতুক সংকট সৃষ্টি হয়। মানুষ দিনের শেষে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিতে বাধ্য হয়। মাদ্রাসা-মক্তবগুলোও চামড়া নেয়নি। কারণ তারাও বেচতে পারেনি। গত বছরর অভিজ্ঞতা থেকে এবারের ঈদের চামড়ার বাজার নিয়েও শংকা রয়েছে। এবার নতুন একটা উপসর্গ দেখা দিয়েছেঃ লবণ সংকট। লবণ মাঙ্গা হয়ে গেলে চামড়া সংরক্ষণ। প্রসেসিং করতে নাকাল হয়ে যাবেন। গুদাম মালিক ও পাইকাররা। গত কয়েক বছর ধরেই কোরবানীর চামড়া নিয়ে চলছে অব্যবস্থাপনা। দেশ হারাচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। কারণ এদেশ থেকে কাঁচা চামড়া রপ্তানি করা না গেলেও চামড়াজাত দ্রব্য, বিশেষ করে জুতা (ফটঅধ্যার) প্রচুর রফতানি হয়। চীন বাংলাদেশের চামড়াজাত সামগ্রীর এক সম্ভাবনাময় বাজার। ইউরোপেও যায়। এসব সামগ্রীর মূল কাঁচামাল অর্থাৎ কাঁচা চামড়ার প্রধান যোগানদার ট্যানারী, গুদাম মালিক ও চামড়ার পাইকাররা। সরকার এবার স্থানীয় পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের অনুমোদন দিয়েছে। তবে নগদ টাকার সংকট বা লবণের অভাবের মতো পরিস্থিতি সৃস্টি হলে কেন্দ্রীয়ই হোক, স্থানীয়ই হোক সব পর্যায়েই চামড়া সংগ্রহ/সংরক্ষণে সংকট সৃষ্টি হবে। জানিনা দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্যের এই সরবরাহ সারি (ঝঁঢ়ঢ়ষু ঈযধরহ) নিয়ে কোনো মহলের সুপরিকল্পিত কোন ষড়যন্ত্র কাজ করছে কিনা ?
সরকার এবছর চামড়ার দামও বেঁধে দেবেন। ধারণা করি গত বছরের চেয়ে এবারের সরকার-নির্দ্ধারিত দর পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ানো হবে এবং সেটাই স্বাভাবিক এবং যুক্তি সঙ্গত। এবার যদি নতুন কোন সংকট সৃষ্টি না হয় কিংবা ‘সিণ্ডিকেটের’ ক্ষমতা বেপরোয়া হয়ে না ওঠে, তাহলে বাজার বাস্তবতা অনুযায়ী পশুর চামড়া বির্পয়ের শিকার নাও হতে পারে। বাজার বাস্তবতা হলো গত অর্থবছরে দেশ থেকে ১২৪ কোটি ডলারের চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ফলে চামড়ার মজুদ এখন কম। কম মানে বেশ কম। ফলে ব্যবচসায়ীা কোরবানীর চামড়া হাটের দিকে তাকিয়ে আছেন, যার উপর নির্ভর করছে পুরো বছরের চামড়া শিল্প গুদাম মালিক ও মজুদদারদের কর্ম পরিকল্পনা এবং অর্থ সংস্থানের কর্মসূচি। চামড়ার বাজারের সাথে লবণের সম্পর্ক নিবিড়। বিশেষ করে কোরবানীর মৌসূমে। বিষয়টি অবশ্যই সরকারের সক্রির বিবেচনায় রয়েছে। তবে কার্যকর আগাম ব্যবস্থা নিতে পারলে শেষ মুহুর্তের সংকট গোটা বাজারকে যেন লেজে-গোবরে অব্সথায় না ফেলে, সাবধানতার জায়গাটা সেখানেই। সরকার ‘ওয়েট ব্লু’ জর্জরিত সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার মেয়াদও খুব দীর্ঘ হবে বলে মনে হয়না। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাশাপাশি বিভাগীয় ও জেলা সদরগুলোর স্থানীয় প্রশাসন এবং প্রাণী সম্পদ বিভাগকে এবার চামড়া বাজারে নজর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় চামড়া পঁচানো বা মাটি চাপা দেবার পূর্ববর্তী বছরগুলোর ব্যর্থতার পুণরাবৃত্তি রোধ করা যাবে।
বছরের বৃহত্তম এই বাজারটির আকার অনেক বড়। এবারের কোরবানীর ঈদে পশুর চাহিদা প্রায় এক কোটি। গরু এবং ছাগল চামড়া সংগ্রহের জন্য লবণের বাজারে বাড়তি চাহিদা দেখা দেবে ৮০-৮২ হাজার টন। লবণ ব্যবসায়ী পাইকারদের মজুদ নিয়েও শংকা নেই। তবে মৌসুম বর্ষাকাল বলে লবণের আর্দ্রতা-অপচয় হিসাবে ধরনেও যোগান ও চাহিদা ভারসাম্য সন্তোষজনক। ট্যানারীর লবণ ভোজ্য লবণের মতো মিহি বা ‘ফ্রী-ফ্লোয়িং’ না হলেও চলে। দুই নম্বর লবণের দামও তুলনামূলকভাবে কম। সরকার এবার চামড়া ও লবণ উভয় পণ্যের দামই নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা নিয়েছে। শেষ মুহুর্তের কোন অঘটন না ঘটলে সংকটের তেমন কোনো কারণ বিদ্যমান নয়। তাই সামনের অর্থবছরে ‘ওয়েট ব্লু’ সহবিবিধ চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ইনশাল্লাহ্্ করা যাবে। ট্যানার্স সমিতি বলছে ঈদের চামড়া বাজার থেকে ২২ কোটি ঘনফুট উন্নতমাণের চামড়া সংগ্রহ করা যাবে, যার মধ্যে ৬৪.৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১.৮২ শতাংশ ছাগলের, ২.২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১.২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। সরকার যে চামড়ার যে দর বেঁধে দেবে স্থানীয় সিণ্ডিকেটের কারসাজিতে কৃত্তিম চাহিদা ঘাটতি দেখিয়ে তার কমে চামড়া বিক্রিতে সাধারণ মানুষকে বাধ্য করার যে কোন অপকৌশলকে রুখতে হবে। এটাই চামড়া শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমষ্টিগত অভিমত।