মো: কামরুল হাসান: করোনা সংক্রমণ রোধে গত ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। পরে সময় বাড়িয়ে ১৪ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের টহল চলমান রয়েছে। এছাড়াও সড়কের মোড়ে মোড়ে বসানো হয় পুলিশের একাধিক তল্লাশি চৌকি। যারা কোন কারণ ছাড়াই ঘর থেকে বের হয়েছে তাদেরকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেও কিছু মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত লোকজনকে আটকিয়ে আদায় করছেন জরিমানা। সচেতন মহল বলছে, শহরে কড়াকড়ি থাকলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঝিমিয়ে থাকার কারণে গ্রামাঞ্চলে বাস্তবায়ন হচ্ছে ঢিলেঢালা লকডাউন। জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, লকডাউন বাস্তবায়নে সরকারের বিধিনিষেধ আইনের তোয়াক্কা না করে জীবিকার তাগিদে রাস্তায় নামছেন খেটে খাওয়া মানুষ। সরকারি, বেসরকারিভাবে এখনো পর্যন্ত কোন খাদ্যসামগ্রী না পাওয়ায় বিপাকে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় টহলের সময় শহর এলাকার কয়েক হাজার দোকানপাট, বিপণিকেন্দ্র বন্ধ থাকলেও তারা চলে যাওয়ার পর আবারো কিছু দোকানদারকে শাটার খোলা রাখতে দেখা যায়। এ যেনো চোর পুলিশের খেলায় পরিণত।শহরের প্রধান সড়কে যাত্রীবাহী বাস না চললেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা যায়। জেলার অন্য উপজেলা থেকে সদর উপজেলায় মানুষজনের চলাচলও ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। আর এ সুযোগে সিএনজি, অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকেরা যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে শহর এলাকায় মার্কেট ও বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে দেখা যায়। সরকারের বিধিনিষেধের বাইরে যারা দোকান খুলছে, বাজারে কোন কারণ ও মাস্ক ছাড়াই অযথা ঘুরাঘুরি করছেন তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ফেনীতে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ২ হাজার ২৮১ জনকে ৬ লাখ ১৯ হাজার ৮১০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরমধ্যে প্রথম দিনে ৯৯ জনকে ৪৫ হাজার ৫৫০ টাকা, দ্বিতীয় দিনে ৩২৩ জনকে ৮৭ হাজার ২০ টাকা, তৃতীয় দিনে ৪১৬ জনকে ৯৫ হাজার ৫০ টাকা, চতুর্থ দিনে ৩৫১ জনকে ১ লাখ ৪৮০ টাকা, পঞ্চম দিনে ৩৯৯ জনকে ৯৩ হাজার ৮৫০ টাকা, ষষ্ঠ দিনে ৩৪২ জনকে ৮২ হাজার ৭৬০ টাকা, সপ্তম দিনে ৩৪৬ জনকে ১ লাখ ৩ হাজার ২০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সচেতন মহল বলছে, শহরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাময়িক টহল থাকার কারনে কড়াকড়ি ও গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঝিমিয়ে থাকার কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছে ঢিলেঢালা লকডাউন। দোকানপাটে জনসমাগম আড্ডা ছিলো চোখের পড়ার মতো। মনে হচ্ছে এই দেশে করোনা ভাইরাস নামে কিছুই নেই। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচাতে গ্রামাঞ্চলে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে এবং অসহায় মানুষদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। স্টার লাইন গ্রুপ’র পরিচালক মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, সরকারের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে আমরা পরিবহন, ফ্যাক্টরি এবং মিল কলকারখানা বন্ধ রেখেছি। যাতে মানুষ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পারে। কিন্তু দেখা যায় প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ না থাকায় রাস্তায় মানুষের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, ফেনী জেলায় এ পর্যন্ত করোনাক্রান্ত রোগী ৫ হাজার ২’শ জন এবং মৃত্যু ৮০ জন। সর্বমোট প্রেরিত নমুনা ২৫ হাজার ৯’শ ৯৯ জন। মোট পরীক্ষা করা হয় ২৬ হাজার ১’শ ৪৮ জন। মোট রেফার্ড ৩১ জন। মোট টেলিমেডিসিন সেবা প্রাপ্ত রোগী ৬৬ হাজার ৮’শ ৪২ জন। আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৬ জন। হোম আইসোলেশনে আছেন ৯’শ ৫৫ জন। হাসপাতালে মোট পজিটিভ রোগী ভর্তি আছে সদর হাসপাতাল ৩৭ জন, দাগনভূঞা ১৬ জন, ছাগলনাইয়া ১৬ জন, সোনাগাজী ৩ জন, পরশুরাম ৭ জন, মেডিনোভা ২ জন মোট ৮১ জন। ফেনীর লস্কর হাট বাজারে গিয়ে দেখা যায় ইউনিয়ন পরিষদ’র গ্রাম-পুলিশ ও বাজার কমিটির পাহারাদার মিলে লকডাউন বাস্তবায়নে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতার চেয়ে উদাসিনতা বেশি। বেশিরভাগ মানুষই উপেক্ষা করছে স্বাস্থ্যবিধি। লস্কর হাটের মতো প্রতিটি বাজার কমিটি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি সর্ম্পকে সচেতন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান জানান, ফেনীতে লকডাউন বাস্তবায়ন ও সাধারণ মানুষকে সচেতনতার লক্ষ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে প্রতিদিন পুরো জেলা জুড়ে ২০ টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। একই সাথে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সরকার লকডাউন দিয়েছে সাধারণ মানুষের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য। কাজেই আপনারা প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রশাসনকে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সহযোগীতা করবেন। জেলা প্রশাসক সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘর থেকে বাহির হওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!