নজরুল বিন মাহমুদুল: চলার পথে হঠাৎ নজর পড়ল একটি ফুলের ওপর। ফুলের সৌন্দর্য আমাকে বিমোহিত করলেও খুব বেশি আশাবাদী করতে পারেনি। কারণ তাঁর সে সৌন্দর্যের পরশা সাজানো আছে একটি বাড়ির আঙিনায় যেখানে সে ফুলের দেখভালের দায়িত্বে কেউ নেই। থাকবেই বা কেন সে ফুলের নাম জবা। বিনামূল্যে পাওয়া যায় বলে এই ফুলের কদর কেউ করেনা। ফুলের দোকানে বাহারি রঙের ফুল শোভা পেলেও দেখা যায় না জবা ফুলকে। জবা ফুলের সৌন্দর্য অন্যান্য ফুলের চেয়ে কম নয় তবুও কেন এই ফুল অবহেলিত ? গ্রামের আনাচে কানাচে ফুটা এই ফুল খুব একটা এখন আর দেখা যায়না। মানুষের হীনমন্যতার কাছে বড় অসহায় জবা ফুল। বহুকাল আগে এই ফুলের কদর থাকলেও সময়ের সাথে হারিয়ে যাচ্ছে জবা ফুল। ছোটবেলায় আমরা অনেক জবা ফুল দেখতাম কিন্তু এখন আর দেখা যায় না। প্রেম ভালবাসায় একসময় জবা ফুল নিবেদন করলেও তা এখন কেবলই স্মৃতি।মানুষ মূল্যের বিনিময়ে কিছু পেলে সেটাকে যতটুকু মূল্যায়ন করে ফ্রিতে পেলে সেটার যথাযথ মর্যাদা দিতে জানেনা। হয়তো সেজন্যই অবহেলিত ফুল হিসেবে জবা ফুল বেশ পরিচিত। দুষ্টামি আর খেলার জন্য আমরা কত জবা ফুল ব্যবহার করেছি তার কোন হিসেব নেই।সময়ের যাতাকলে পড়ে আছে জবা ফুল। যত্রতত্র এখন আর এই ফুল ফুটে না। এখন আর ছোট ছেলে মেয়েরা সে ফুলের হদিস পায় না। নতুন প্রজন্মের অনেকে ছেলেমেয়ে আছে যারা এই ফুলের নাম ও জানেনা।যেকোনো মানুষকে বিমোহিত করতে পারে এই ফুল। এই ফুলের গঠন সত্যি অনবদ্য। এই গাছ বেঁচে থাকে অনেক বছর। গাছটির পরিচর্যা না করলেও তেমন ক্ষতি হয় না। আমাদের দেশে বেশি দেখা যায় উজ্জ্বল লাল রঙের জবা ফুলটি। হয়তো তার সুবাস নেই, কিন্তু গাড় সবুজ অসংখ্য পাতার ঝোপালো গাছের ফাকে ফাকে গাছ ভরা উজ্জ্বল লাল ফুলগুলো দেখতে অসাধারণ লাগে। তাছাড়া এর ঔষধি গুনের কারণেও ফুলটি অনেক বেশি সমাদৃত।আমাদের দেশে সাধারণত একে রক্তজবা, শুধু জবা কিংবা জবা কুসুম নামে ডাকা হয়। যার ইংরেজি নাম ঐরনরংপঁং, ঈযরহবংব যরনরংপঁং বা ঈযরহধ ৎড়ংব। যদিও গোলাপ ফুলের সাথে এর কোনোদিক দিয়েই কোন মিল নেই, কিন্তু উদ্ভিদবিজ্ঞানী ঈধৎষ খরহহধবঁং ‘গধষাধপবধব’ গোত্রের এই ফুলটির নাম দেন ‘হিবিস্কাস রোসা-সিনেন্সিস’, আর এই লাতিন শব্দ ‘রোসা সিনেন্সিস’ এর অর্থ আসলে ‘চীন দেশের গোলাপ’। আর তাই এই ফুল ‘চীনা গোলাপ’ নামেও পরিচিত। আদি উৎপত্তি স্থান পূর্ব এশিয়ার ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চল। পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট ৪-৫ ইঞ্চি ব্যাসের জবা ফুলগুলো সাধারণত উজ্জ্বল লাল এবং সাদা রঙের হয়ে থাকে। তবে লাল, সাদা ছাড়াও বর্তমানে অনেক সংকর জাতের বিভিন্ন রঙের যেমন হলুদ, গোলাপি, কমলা, বেগুনী ইত্যাদি এবং কিছু মিশ্র রঙের জবা ফুল হয়ে থাকে। সারা বছর ফুল ফুটলেও গ্রীষ্ম থেকে শরৎকাল পর্যন্ত বেশি ফোটে আর ফুল ফোটার পর ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। গাছ চিরসবুজ গুল্মজাতিয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ যা ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। তবে ঠা-া সহ্য করতে পারেনা, তাই ১০ সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রায় জবা গাছ বাঁচেনা। গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলে একটু আর্দ্র মাটিতে এ ফুল গাছ ভালো জন্মে। বীজ, কন্দ এবং শাখা কলমের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা যায়। বাড়ির উঠান কিংবা ফুলের বাগান ছাড়াও ছাদে কিংবা বারান্দায় টবে খুব সহজে এই ফুল গাছ লাগানো যায়।এই ফুল শুধু শোভাবর্ধনেই সীমাবদ্ধ নয়, ভেষজ গুণাগুণ সমৃদ্ধ জবা বিভিন্ন রোগে, কবিরাজি চিকিৎসায় এবং রূপচর্চায় নানান ভাবে ব্যবহার করে আসছে সাধারণ মানুষ। এছাড়াও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা পার্বণে এই ফুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফুল দেহের শক্তি বৃদ্ধি করা সহ চোখ ওঠা, সর্দি-কাশি, ব্রণ ইত্যাদি নানান রোগে ব্যবহৃত হয়। তবে এর সবথেকে বেশি ব্যবহার দেখা যায় চুল পড়া বন্ধ করা, চুল বড়, ঘন এবং কালো করা সহ মাথার ত্বকের নানান চিকিৎসায়।এতসব গুণ থাকা সত্ত্বেও নিরবেই হারিয়ে যাচ্ছে জবা ফুল। শহর থেকে গ্রাম ঘুরেও এই ফুল গাছের খুব একটা দেখা মিলেনা। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো কালের গহ্বরে হারিয়ে যাবে জবা ফুল। তাই জবা ফুল গাছ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত যথাযত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!