নুর উল্লাহ কায়সার/এস.এন আবছার: সোনাগাজীতে সমুদ্র উপকূলীয় বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলের ভূমিগুলো বছরের পর বছর অনাবাদি ও পতিত থাকলেও বর্তমানে সেখানে তরমুজ চাষ হচ্ছে। গত দুই বছর বাণিজ্যিক ভাবে এসব এলাকায় তরমুজ চাষ করে লাভবান হওয়ায় এবারও বেড়েছে তরমুজের আবাদ। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি ও বাজারজাতকরণে সুবিধা থাকায় এখানকার সুস্বাদু মিষ্টি তরমুজ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলার ভোক্তাদের কাছে।
জানা যায়, ফেনীর জমিতে পূর্বে কখনো তরমুজ চাষ না হলেও ২০১৭ সালে নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আগত এক কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে সোনাগাজীর চরদরবেশ ইউনিয়নে তরমুজ চাষ করেন। ওই বছরে তার লাভজনক সফলতা দেখে ২০১৯ সালে ৮ থেকে ১০ জন কৃষক তাদের জমিতে রবি মৌসূমে তরমুজ চাষ করে লাভবান হন। উৎপাদনে সম্ভাবনা ও ভালো দাম পেয়ে নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকা থেকে আসা পেশাদার তরমুজ চাষীরা ২০২০ সালে সোনাগাজীর সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় ১০৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে তরমুজ চাষ শুরু করেন। তাদের দেখে ২০২১ সালে ৩১৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়। চলতি মৌসূমে সোনাগাজীর বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে ভিক্টর সুগার, ওশেন সুগার, ব্লাক বেরী ও দেশীয় জাতের ৩৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়।
সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনাগাজীর চরাঞ্চলে যুগেরপর যুগ অনাবাদি অবস্থায় থাকা জনমানবশূণ্য বিস্তৃর্ণ ভূমি এখন তরমুজ চাষে সবুজে পরিণত হয়েছে। উপজেলার চরদরবেশ, চরছান্দিয়া ও সোনাগাজী সদর ইউনিয়নে যতদূর চোখ যাবে ততটুকুতেই দেখা মেলবে তরমুজের আবাদ। নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও কোম্পাণীগঞ্জ থেকে তরমুজ চাষ করতে আসা কৃষকরা ক্ষেতের মাঝেই ‘টংঘর’ স্থাপন করে থাকা-খাওয়া আর বিশ্রাম করছেন। মরু-সাদৃশ ভূমিতে রৌদ্রের উত্তাপ এড়িয়ে কৃষকরা এখন তরমুজ ক্ষেতে আগাছা ও পোকা দমনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পরিবেশ ভালো হওয়ায় ইতোমধ্যে কিছু কিছু ক্ষেতে খুচরা পর্যায়ে তরমুজ বেচা-বিক্রি শুরু হলেও আগামী সপ্তাহ থেকে জমে উঠবে তরমুজ বেচা কেনা। নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আসা তরমুজ চাষী শাহরাজ সর্দার জানান, তিনি স্থানীয়দের থেকে ৫ মাসের জন্য প্রায় ৭০ একর জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন। প্রতি একরে উৎপাদন ও পরিচর্যা ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৬০/৭০ হাজার টাকা। ফলনের অবস্থা দেখে তিনি প্রতি একরে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন। তিনি জানান, তরমুজ চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা তেমন নেই। সময় কম লাগে। লাভও ভালো। তাই তিনি প্রতিবছর স্থানীয়দের থেকে জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করে আসছেন। তরমুজ বিক্রি শেষে তিনি পূনরায় নিজ এলাকায় চলে যাবেন।
একইভাবে ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন মো. হানিফ। তিনি জানান, সোনাগাজীতে উৎপাদিত তরমুজের আকার, স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ভালো থাকায় কম সময়ে পাইকারদের আকৃষ্ট করা গেছে। তাছাড়া গত বছর সোনাগাজী-কোম্পাণীগঞ্জ সড়কে সাহেবের হাট সেতু উদ্বোধনের পর নোয়াখালী ও ফেনীতে যাতায়াত সুবিধা সৃষ্টি হয়। এর ফলে সোনাগাজীর চরাঞ্চলে উৎপাদিত ফসলের বাজারজাত সহজ হয়ে ওঠায় পাইকারী ক্রেতাদের কাছে এখানকার তরমুজের চাহিদা বেড়ে গেছে। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সোনাগাজী হতে সংগৃহিত তরমুজ সহজেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌছে দেয়া যায়।
স্থানীয় তরমুজ চাষী নেজাম উদ্দিন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারও তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। সঠিক সময়ে বাজারজাত করা গেলে আশাকরি তরমুজ চাষীরা ভালোই লাভবান হবেন। সোনাগাজীর চরদরবেশ ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান চৌধুরী জানান, বাজারজাত করণে সুবিধা ও কম সময়ে ভালো লাভ হওয়ায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে অনেক কৃষক ফেনীর সোনাাগাজীতে তরমুজ চাষ করতে এসেছেন। চরদরবেশ ইউনিয়নের স্থানীয় কৃষকদের থেকে লিজ নেয়া অন্তত ১৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গত সপ্তাহে দুই কাভার্ডভ্যান আগাম জাতের তরমুজ বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য পাইকাররা তরমুজের ক্ষেত পরিদর্শন করে দরদাম করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, এবার সোনাগাজীতে ব্লাক জায়ান্ট, গ্লোরী, সুগার বেবি, ট্রপিক্যাল ড্রাগন, বঙ্গলিংক ও ভিক্টর সুগার জাতের তরমুজ বেশি চাষ হয়েছে। নিয়মিত তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করে চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, চরাঞ্চলে তরমুজের ফলন ভালো হওয়ায় দিনদিন আবাদ বাড়ছে। চলতি মৌসূমে উপজেলার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আগামীতে আরো বেশি তরমুজ আবাদের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মূল্যায়ন কর্মকর্তা আবু নঈম মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জানান, সোনাগাজীতে প্রকল্পের আওতায় ১০ জন কৃষককে তরমুজ চাষের প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। আশাকরি প্রদর্শনীর উৎপাদন ও লাভ দেখে কৃষকরা তরমুজ চাষে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হবে। ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম জানান, সোনাগাজীতে তরমুজের আবাদ ও ফলন বাড়াতে কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিদর্শন ও পরামর্শদানসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চালিয়ে আসছেন। এছাড়াও স্থানীয় কৃষকদেরকে আবাদে উৎসাহী করে তুলতে ৫ জেলা উন্নয়ন প্রকল্প হতে জেলাজুড়ে তরমুজ চাষের প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!