মোঃ কামরুল হাসান:আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত ফেনী-১ আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে আ'লীগ-বিএনপি। ইতিমধ্যে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করায় তিন উপজেলাজুড়ে। সর্বত্রই চলছে নানান গুঞ্জন ও আলোচনা সমালোচনার ঝড়। সভা, সমাবেশ, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচিতে সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে স্ব স্ব দলীয় নেতাকর্মীদের। এ আসনটি টানা দু’বার মহাজোটের দখলে থাকলেও এবার জাসদ থেকে আসনটি ছিনিয়ে নিতে চায় আওয়ামীলীগ। এজন্য দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে এখন থেকে জেলা ও হাইকমান্ড নেতৃবৃন্দের কাছে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন আ'লীগের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা। এদিকে, জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও নেতাকর্মীদের মুক্তি ও জাতীয় কর্মসূচিকে ঘিরে ইতিমধ্যে রাজনীতির মাঠে সরব হয়ে উঠেছে বিএনপি।
আওয়ামী লীগ থেকে ১৯৭৩ সালে সাংবাদিক এবিএম মুসা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ফেনী-১ আসনে দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ আর কোনো দলীয় এমপি পায়নি। এ আসনে বিগত দুই নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি নির্বাচিত হন। বিগত নির্বাচনে তার পরিবর্তে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় প্রার্থী দেয়ার দাবিতে নেতাকর্মীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে নির্বাচনী মাঠ। শেষ পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে নৌকা প্রতীক নিয়ে জাসদ নেত্রীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামেন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। কিন্তু শিরীন আখতার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন ও তাদের সাথে সমন্বয় না করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এনিয়ে ফেনী-১ আসনের ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় আওয়ামীলীগ নেতারা প্রকাশ্য সভা-সমাবেশেও অভিযোগ করেছেন। তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের হাইকমান্ডের কাছে ফেনী-১ আসনে দলীয় প্রার্থী দেয়ার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা দলের তৃণমূল নেতা মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলকে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার জন্য জোর দাবি তুলেছেন। মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল করোনার শুরু থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত প্রতি শুক্রবার অসহায় হতদরিদ্রদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান করে আসছেন। যার কারনে সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে উঠেন মানবিক চেয়ারম্যান হিসেবে। এখন টানা তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ফেনী-১ আসনে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা অনেক মজবুত বলে দাবি করছেন আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল। তিনি আরো বলেন, যেকোনো পরিবেশে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করার মতো জনসমর্থন রয়েছে তাদের। এজন্য গত দুই বছর ধরে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বর্তমান সরকারের আমলে ফেনী-১ নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভালো প্রভাব রাখবে বলে দাবি করেছেন তিনি। সোহেল চৌধুরী ছাড়াও জেলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও পোর্টল্যান্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মজুমদারের নামও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে শোনা যাচ্ছে। দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার কথা জানিয়েছেন মিজানুর রহমান মজুমদার। তিনি করোনার শুরু থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত অসহায়, হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নগদ অর্থ প্রদান করে তাদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে ফেনী জেলার তিনটি আসনেই নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফেনী-২ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী।
বিএনপি থেকে ৯০ দশকে এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে ফেনী-১ আসনটি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নিজের আসন বলে পরিচিত। এখানে তার পৈতৃক বাড়ি অবস্থিত। প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি বরাবরই প্রথম অবস্থানে ছিল। সেই থেকে টানা পাঁচবার খালেদা জিয়া এ আসনে জিতেছেন। তবে বিগত দুটি নির্বাচনে এ আসনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে জাসদ নেত্রী শিরীন আখতার নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। গত ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার অবর্তমানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন। ফেনী-১ আসনের সমন্বয়কের দায়িত্ব নিয়ে তিনি নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় দুই দশকের পুরনো নিষ্ক্রিয় কমিটিকে ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দলকে চাঙ্গা করতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমানে ফেনী-১ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি সামর্থ্য আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে মজবুত বলে জানিয়েছেন ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সাবেক পৌর মেয়র মো: আলমগীর বিএ। তিনি আরো বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী ও সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আবারো বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান। বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে ফেনী-১ আসনে বিএনপির চেয়ারপার্সনকে বিজয়ী করতে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ বলে জানিয়েছেন তিনি। বেগম খালেদা জিয়া কোনো কারণে প্রার্থী না হলে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রফিকুল আলম মজনুর নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে।
জাসদ থেকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এমপি শিরীন আখতার মহাজোটের শরীক দল হিসেবে আবারো এমপি প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি মহাজোট থেকে ভিআইপি আসনটিতে এ পর্যন্ত টানা দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দলের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হলেও দুই দফায় এমপি থাকার সুবাধে এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট উন্নয়নে তার আন্তরিকতা ছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা নিয়ে মাঠে নামলেও আওয়ামী লীগের সড়ক অবরোধসহ কঠিন বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী আপেল প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থনে নির্বাচনী মাঠে সরব হয়ে ওঠেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে চাপে পড়ে নৌকার পক্ষে ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারো নৌকা নিয়ে মাঠে এলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের তার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে রাখা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন মহলে।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!