মো. কামরুল হাসান, সাভার থেকে ফিরে:দীর্ঘদিনের স্বপ্ন গোলাপ গ্রামে যাওয়ার। কিন্তু ব্যস্ততার কারনে আজ যাচ্ছি কাল যাচ্ছি করে যাওয়া হচ্ছে না বহুদিন ধরে। অবশেষে আকাশে মেঘ না থাকা স্বত্বেও হঠাৎ বৃষ্টির মতো যাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করা হলো। গেলো শুক্রবার আমরা চারজন বাসা থেকে বের হলাম। গন্তব্য কাঙ্খিত স্বপ্নের নগরী গোলাপ গ্রাম। প্রথমে আমরা ঢাকার শাহাবাগ থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা যোগে হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত যাই। এরপর উত্তরা হাউজ বিল্ডিং দিয়ে লেগুনায় করে দিয়াবাড়ি বটতলা হয়ে অটোরিকশা দিয়ে পঞ্চবিথি পর্যন্ত যাই। এরপর আরেকটি বাসে করে বিরুলীয়া ব্রীজ। সেখান থেকে আবারো ১'শ'৫০ টাকা ভাড়ায় একটা টমটম নিয়ে রওয়ানা দিই সাদুল্লাহপুরের দিকে। বিরুলীয়া ব্রীজ পার হয়ে আকরান বাজারের ভিতর দিয়ে সাদুল্লাহপুরের দিকে যেতে রাস্তার দু'পাশে চোখে পড়লো লাল সুবুজে অরণ্য চোখ জুড়ানো গোলাপ ফুলের সারি সারি বাগান। স্থানীয়দের কাছে সাদুল্লাহপুর হলেও অসংখ্য গোলাপের বাগান থাকায় ওই গ্রামটি গোলাপ গ্রাম হিসেবে বেশ পরিচিত। যাইহোক! টমটমে বিশ মিনিট পথ চলার পর আমরা পৌঁছে গেলাম কাঙ্খিত স্বপ্নের নগরী গোলাপ গ্রামে। প্রখর রোদ, সূর্যটা মাথার উপরে। ঘড়ির কাটায় ঠিক তখন ১টা বেজে গেলো। যেখানে গাড়ি থেকে নামলাম তার পাশে মসজিদে ইমাম সাহেবের খুতবার আওয়াজ শুনতে পেলাম। এরপর সবাই মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করে নিলাম। বের হয়ে দুপুরের খাবার সেরে সবাই চলে গেলাম গোলাপ বাগানের দিকে। যেদিকে চোখ যায় সারিসারি সব গোলাপের বাগান। তখন মনে হলো, আহ! স্বপ্নের রাজ্যে বাস্তবে প্রবেশ করলাম। বাতাসে ভেসে আসা ফুলের সৌরভ আমাদের মনকে আকৃষ্ট করে। আর সেখানে মন মাতাবে যে কাউকেই। বাগানের ভিতরে অনেক দোকানী তাজা ফুলের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। আবার কেউ মেয়েদের মাথায় লাগানোর জন্য প্লাস্টিকের চাকতির মধ্যে তাজা লাল গোলাপ বেঁধে বিক্রি করছে ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা দামে। অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে গোলাপের সাথে সখ্যতা করে সেলফিতে মগ্ন হয়ে আছেন। বাগানের আইল ধরে কিছুদূর যেতেই চোখে পড়লো চাষীরা গাছ থেকে তাজা ফুলগুলো বাজারে বিক্রি করার জন্য কাটার দিয়ে কেটে আঁটি বেঁধে পানি রাখার পাত্রের মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছেন। যাতে এগুলো শুকিয়ে নষ্ট না হয়ে যায়। সেখানে দেখা হলো স্থানীয় চাষী মোঃ. সুমন'র সাথে। গাছ থেকে তাজা ফুল সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। এক মহূর্তের জন্যও দম ফেলানোর ফুসরত নেই তার। সুমন'র সাথে কথা বলে জানা যায়, গোলাপ চাষই এখানকার ৯০ ভাগ লোকের একমাত্র ভরসা। গোলাপ চাষ করে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তিনিও তার পূর্ব-পুরুষদের এ পেশাকে ধরে রাখতে ১০বছর আগে তার বাবার ১'শ শতক জায়গার উপর তিন টাকা দরে ১৫ হাজার গোলাপের চারা লাগান। সপ্তাহে একবার করে গাছের গোড়া পরিস্কার করতে হয় এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে গাছ ও ফুলকে রক্ষা করার জন্য পোকলেম, ভাইটামাইট ওষুধ স্প্রে করতে হয়। চারা লাগানোর কয়েক মাস পর থেকে গাছে ফুল ধরা শুরু হয়। প্রতিদিন ১৫'শ থেকে ২ হাজার পিস গোলাপ সকালে অথবা বিকালে একবার করে বাগান থেকে ফুলগুলো কাটার দিয়ে কেটে ভ্যানগাড়ি করে নিয়ে স্থানীয় শ্যামপুর ও সাদুল্লাহপুর বাজারে পাইকারি দামে বিক্রি করেন। একশ পিস গোলাপ চার টাকা থেকে পাঁচ টাকা দরে চার'শ থেকে পাঁচ'শ টাকায় বিক্রি করেন। আবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ছাড়াও বিভিন্ন দিবসে প্রতি আঁটি দুই হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায়ও বিক্রি করেন। গোলাপের চাষ ও বিক্রি করে বাবা মা এবং স্ত্রী দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে অনেক সুখেই দিন কাটছে তার। সেখানে আরো কথা হয় স্থানীয় আরেক চাষী অর্ধশত বছর বয়সী মোমিন মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, এখানকার শতকরা ৯০ ভাগ লোক গোলাপ চাষ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এখানে মূলত মিরান্ডা প্রজাতির লাল গোলাপের চাষ হয়। পুরো গ্রাম জুড়ে সারা বছরই হয় ফুলের চাষ। লাল গোলাপের পাশাপাশি রয়েছে সাদা গোলাপ, জারবেরা ও গ্ল্যাডিওলাস ফুলের বাগান। প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকার ফুল বিক্রি হয় এই গোলাপ গ্রাম থেকেই। যা ঢাকার শাহাবাগ সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করেন বিক্রেতারা। ৩'শ পিস গোলাপ ফুলের এক আঁটি বিক্রি হয় ১৫'শ টাকা থেকে ১৬'শ টাকায়। বাজারভেদে কখনো দ্বিগুণ দামও পায়। তিনি আরো বলেন, প্রকৃতির এই কোলাহলময় গোলাপ নগরীতে নিজেদের গাঁ ভাসাতে প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেক ভ্রমন পিয়াসু মানুষ। নারায়ণগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী সাঈদ ভাইয়ের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ফেসবুকে এই গোলাপ গ্রাম দেখে অনেক ভালো লাগলো। বিকেলের প্রকৃতিটা অনেক সুন্দর। তাই স্ত্রী, ছেলেদেরকে নিয়ে চলে এসেছেন প্রকৃতির নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এরপর সেখানে আরো কয়েকটি বাগান ঘুরে ঘুরে দেখলাম। গোলাপের সাথে সখ্যতা করে নিজেরাও কিছু ছবি তুলে নিলাম। যাইহোক! এবার সবাই আপন নীড়ে ফেরার পালা। আসার পথে চাষী সুমন'র বাগান থেকে অর্ধশতাধিক গোলাপ তিন'শ টাকায় কিনে নিলাম। গোলাপ গ্রামে আমাদের আনন্দময় মুহূর্তগুলো ছিলো সত্যি অনেক মনোমুগ্ধকর।
শর্ত পূরণ না করায় ফেনীর ৯...
ফেনীর মেধাবী মুখ রিয়ার এড...
চৌদ্দগ্রামে জুয়া খেলার সর...
ছাগলনাইয়ায় অবহেলিত মানু...
Subscribe to our mailing list to get the new updates!